বিষয়: মৌল, যৌগ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া
অধ্যায় ২.২: পদার্থের গঠন (নোটস)
১. পরমাণু (Atom) কী?
মৌলের ক্ষুদ্রতম অবিভাজ্য কণা হলো পরমাণু, যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। (জন ডালটনের পরমাণুবাদ অনুসারে)।
২. অণু (Molecule) কী?
মৌলের বা যৌগের যে ক্ষুদ্রতম কণা প্রকৃতিতে স্বাধীনভাবে থাকতে পারে, তাকে অণু বলে। অণু এক বা একাধিক পরমাণু দিয়ে গঠিত হতে পারে। (অ্যাভোগাড্রোর প্রকল্প অনুসারে)।
৩. পরমাণু কী কী কণা দিয়ে তৈরি?
পরমাণু প্রধানত তিনটি মূল কণা দিয়ে তৈরি:
- ইলেকট্রন (Electron): ঋণাত্মক (-) আধানযুক্ত কণা।
- প্রোটন (Proton): ধনাত্মক (+) আধানযুক্ত কণা।
- নিউট্রন (Neutron): নিস্তড়িৎ বা আধানহীন কণা।
৪. পরমাণু নিস্তড়িৎ হয় কেন?
একটি পরমাণুতে প্রোটনগুলির মোট ধনাত্মক (+) আধানের পরিমাণ এবং ইলেকট্রনগুলির মোট ঋণাত্মক (-) আধানের পরিমাণ সমান হয়। ফলে পরমাণুর মোট আধানের মান শূন্য হয়, তাই পরমাণু নিস্তড়িৎ।
৫. রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেল অনুসারে নিউক্লিয়াস (Nucleus) বা কেন্দ্রক কী?
রাদারফোর্ডের মডেল অনুসারে, পরমাণুর প্রায় সমস্ত ভর এবং সমস্ত ধনাত্মক আধান (প্রোটন) তার মাঝখানে একটি অত্যন্ত অল্প জায়গায় জমাট বেঁধে থাকে। এই ভারী অংশটির নাম নিউক্লিয়াস বা কেন্দ্রক।
৬. বোরের পরমাণু মডেল অনুসারে ইলেকট্রনগুলি কীভাবে থাকে?
বোরের মডেল অনুসারে, ইলেকট্রনগুলি নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে কয়েকটি নির্দিষ্ট বৃত্তাকার কক্ষপথে ঘোরে। নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন থাকে।
কার্বন (C) পরমাণু (6 প্রোটন, 6 নিউট্রন, 6 ইলেকট্রন)
অক্সিজেন (O) পরমাণু (8 প্রোটন, 8 নিউট্রন, 8 ইলেকট্রন)
৭. পরমাণু ক্রমাঙ্ক (Atomic Number) কাকে বলে?
কোনো মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত মোট প্রোটন সংখ্যাকে তার পরমাণু ক্রমাঙ্ক বলে। এটিকে সাধারণত ‘Z’ অক্ষর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
৮. ভরসংখ্যা (Mass Number) কাকে বলে?
কোনো মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে উপস্থিত মোট প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার যোগফলকে তার ভরসংখ্যা বলে। এটিকে ‘A’ অক্ষর দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
৯. আইসোটোপ (Isotope) বা সমস্থানিক কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
একই মৌলের যেসব পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা (পরমাণু ক্রমাঙ্ক) সমান কিন্তু নিউট্রন সংখ্যা ভিন্ন (ফলে ভরসংখ্যা ভিন্ন), তাদের পরস্পরের আইসোটোপ বা সমস্থানিক বলে।
উদাহরণ: হাইড্রোজেনের তিনটি আইসোটোপ হলো প্রোটিয়াম ($^1H$), ডয়টেরিয়াম ($^2H$), এবং ট্রিশিয়াম ($^3H$)। তিনটিরই প্রোটন সংখ্যা ১, কিন্তু নিউট্রন সংখ্যা যথাক্রমে ০, ১, ও ২।
১০. আইসোবার (Isobar) বা সমভারিক কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
ভিন্ন মৌলের যেসব পরমাণুর ভরসংখ্যা (প্রোটন + নিউট্রন) সমান কিন্তু প্রোটন সংখ্যা (পরমাণু ক্রমাঙ্ক) ভিন্ন, তাদের পরস্পরের আইসোবার বা সমভারিক বলা হয়।
উদাহরণ: আর্গন ($^{40}_{18}Ar$) এবং ক্যালসিয়াম ($^{40}_{20}Ca$)। উভয়ের ভরসংখ্যা ৪০, কিন্তু প্রোটন সংখ্যা যথাক্রমে ১৮ ও ২০।
১১. প্লাজমা (Plasma) কী?
প্লাজমা হলো পদার্থের চতুর্থ অবস্থা। খুব বেশি উষ্ণতায় (যেমন সূর্যের কেন্দ্রে) গ্যাসের অণু-পরমাণু ভেঙে গিয়ে ধনাত্মক আধানযুক্ত নিউক্লিয়াস ও ঋণাত্মক আধানযুক্ত ইলেকট্রন আলাদা হয়ে যায় এবং একটি প্রচণ্ড গরম আয়নিত গ্যাসের মতো অবস্থা তৈরি করে। এই অবস্থাকেই প্লাজমা বলে।
১২. আয়ন (Ion) কাকে বলে? এটি কয় প্রকার ও কী কী?
তড়িৎগ্রস্ত পরমাণু বা পরমাণুর জোটকে আয়ন বলে। নিস্তড়িৎ পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জন করলে আয়নে পরিণত হয়।
আয়ন দুই প্রকার:
- ক্যাটায়ন (Cation): ধনাত্মক (+) আধানযুক্ত আয়ন। পরমাণু ইলেকট্রন বর্জন করলে ক্যাটায়ন তৈরি হয়। যেমন – $Na^+$।
- অ্যানায়ন (Anion): ঋণাত্মক (-) আধানযুক্ত আয়ন। পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করলে অ্যানায়ন তৈরি হয়। যেমন – $Cl^-$।
১৩. সোডিয়াম ক্লোরাইড ($NaCl$) কীভাবে গঠিত হয়?
সোডিয়াম (Na) পরমাণুর শেষ কক্ষপথের ১টি ইলেকট্রন বর্জন করে $Na^+$ ক্যাটায়নে পরিণত হয়। ক্লোরিন (Cl) পরমাণু সেই বর্জিত ইলেকট্রনটি গ্রহণ করে $Cl^-$ অ্যানায়নে পরিণত হয়। এই বিপরীত আধানযুক্ত আয়ন দুটি স্থিরতড়িৎ আকর্ষণ বলের দ্বারা যুক্ত হয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড (খাদ্য লবণ) নামক আয়নীয় যৌগ গঠন করে।
চিত্র: আয়নীয় যৌগ (NaCl) গঠন। সোডিয়াম ইলেকট্রন বর্জন করে এবং ক্লোরিন তা গ্রহণ করে।
১৪. আয়নীয় যৌগ (Ionic Compound) কাকে বলে?
ধাতু ও অধাতুর পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ ও বর্জনের মাধ্যমে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নে পরিণত হওয়ার পর, যে স্থিরতড়িৎ আকর্ষণ বলের দ্বারা যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করে, তাকে আয়নীয় যৌগ বলে। যেমন – $NaCl, MgO, CaCl_2$।
১৫. মূলক বা র্যাডিক্যাল (Radical) কী? উদাহরণ দাও।
একাধিক পরমাণু জোটবদ্ধ হয়ে যে আয়ন তৈরি করে, তাকে মূলক বা র্যাডিক্যাল বলে। এরা একটি এককের মতো আচরণ করে।
উদাহরণ:
- ক্যাটায়ন মূলক: অ্যামোনিয়াম ($NH_4^+$)
- অ্যানায়ন মূলক: সালফেট ($SO_4^{2-}$), নাইট্রেট ($NO_3^-$), হাইড্রক্সাইড ($OH^-$), কার্বনেট ($CO_3^{2-}$)
১৬. সমযোজী বন্ধন (Covalent Bond) কাকে বলে?
যখন দুটি পরমাণু (সাধারণত অধাতুর) ইলেকট্রন গ্রহণ বা বর্জন না করে, পরস্পরকে ইলেকট্রন জোড় ‘ব্যবহার’ করতে দিয়ে রাসায়নিকভাবে যুক্ত হয়, তখন তাকে সমযোজী বন্ধন বলে।
১৭. সমযোজী যৌগ (Covalent Compound) কাকে বলে?
যেসব যৌগের অণুতে পরমাণুগুলি পরস্পরের সঙ্গে সমযোজী বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত থাকে, তাদের সমযোজী যৌগ বলে।
উদাহরণ: জল ($H_2O$), মিথেন ($CH_4$), অ্যামোনিয়া ($NH_3$), হাইড্রোজেন ($H_2$)।
১৮. মিথেন ($CH_4$) অণুর গঠন দেখাও।
একটি কার্বন (C) পরমাণু তার শেষ কক্ষের ৪টি ইলেকট্রনকে ৪টি হাইড্রোজেন (H) পরমাণুর ৪টি ইলেকট্রনের সঙ্গে ৪টি পৃথক সমযোজী বন্ধন (ইলেকট্রন জোড়) গঠন করে মিথেন ($CH_4$) অণু তৈরি করে।
চিত্র: মিথেন ($CH_4$) অণুর সমযোজী বন্ধন।