প্রকল্প পত্র: আলো
Processing…

বিষয়: ভৌত পরিবেশ

অধ্যায় ১.৪: আলো (নোটস)

১. প্রতিবিম্ব (Image) সৃষ্টির প্রধান কারণ কী? [২ নম্বর]

প্রতিবিম্ব সৃষ্টির প্রধান দুটি কারণ হলো আলোর প্রতিফলন (Reflection)প্রতিসরণ (Refraction)। যখন কোনো বস্তু থেকে আলোকরশ্মি সরাসরি আমাদের চোখে না এসে প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হয়ে চোখে পৌঁছায়, তখন আমরা বস্তুটির প্রতিবিম্ব দেখি।

২. সদবিম্ব (Real Image) ও অসদবিম্ব (Virtual Image) কাকে বলে? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

  • সদবিম্ব: যে প্রতিবিম্বকে পর্দায় ফেলা যায় (যেমন, সিনেমার পর্দার ছবি বা আতস কাচ দিয়ে সূর্যের প্রতিবিম্ব), তাকে সদবিম্ব বলে। এটি তখনই গঠিত হয় যখন আলোকরশ্মিগুচ্ছ প্রতিফলিত বা প্রতিসৃত হওয়ার পর সত্যি সত্যি কোনো বিন্দুতে মিলিত হয়।
  • অসদবিম্ব: যে প্রতিবিম্বকে পর্দায় ফেলা যায় না (যেমন, সমতল আয়নায় আমরা যে মুখ দেখি), তাকে অসদবিম্ব বলে। এটি তখনই গঠিত হয় যখন আলোকরশ্মিগুচ্ছ কোনো বিন্দু থেকে আসছে বলে মনে হয়, কিন্তু আসলে মিলিত হয় না।
সদবিম্ব বনাম অসদবিম্ব সদবিম্ব (উত্তল লেন্স) পর্দা অসদবিম্ব (সমতল দর্পণ) বস্তু প্রতিবিম্ব

চিত্র: সদবিম্ব (পর্দায় ফেলা যায়) ও অসদবিম্ব (পর্দায় ফেলা যায় না)।

৩. সমতল আয়না থেকে বস্তুর দূরত্ব ও প্রতিবিম্বের দূরত্বের মধ্যে সম্পর্ক কী? [২ নম্বর]

সমতল আয়না থেকে বস্তুর দূরত্ব যত, আয়না থেকে প্রতিবিম্বের দূরত্বও ঠিক তত হয়।

৪. দুটি সমতল আয়নাকে $90^{\circ}$ কোণে রাখলে মাঝে একটি বস্তু রাখলে কয়টি প্রতিবিম্ব দেখা যাবে? [২ নম্বর]

আয়না দুটির মধ্যে কোণ $90^{\circ}$ হলে, প্রতিবিম্বের সংখ্যা (n) হবে:
$n = \frac{360^{\circ}}{90^{\circ}} – 1 = 4 – 1 = 3$ টি।

সাধারণ সূত্র: $n = \frac{360^{\circ}}{\theta} – 1$ (যেখানে $\theta$ হলো আয়না দুটির মধ্যবর্তী কোণ)

৫. দুটি সমতল আয়নাকে সমান্তরালভাবে রাখলে কয়টি প্রতিবিম্ব গঠিত হয়? [১ নম্বর]

দুটি সমতল আয়নাকে পরস্পরের সমান্তরালভাবে রাখলে (যেমন সেলুনে থাকে), তাদের মধ্যে অসীম সংখ্যক প্রতিবিম্ব গঠিত হয়।

৬. পেরিস্কোপ (Periscope) কী? এটি কোন নীতির ওপর ভিত্তি করে কাজ করে? [৩ নম্বর]

পেরিস্কোপ এমন একটি যন্ত্র যার সাহায্যে ভিড়ের মধ্যে থেকেও খেলা দেখা যায় বা সাবমেরিন থেকে জলের ওপরের বস্তু দেখা যায়।

এটি আলোর প্রতিফলন নীতির ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। একটি লম্বা নলের দুই প্রান্তে দুটি সমতল আয়না পরস্পরের সমান্তরালে $45^{\circ}$ কোণে বসানো থাকে। বস্তু থেকে আলো প্রথম আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে দ্বিতীয় আয়নায় পড়ে এবং সেখান থেকে আবার প্রতিফলিত হয়ে দর্শকের চোখে পৌঁছায়।

পেরিস্কোপের কার্যনীতি বস্তু চোখ

চিত্র: পেরিস্কোপে আলোর প্রতিফলন।

৭. ক্যালাইডোস্কোপ (Kaleidoscope) কী? [২ নম্বর]

ক্যালাইডোস্কোপ একটি মজার খেলনা যা আলোর একাধিক প্রতিফলনের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। তিনটি আয়তাকার সমতল আয়নাকে $60^{\circ}$ কোণে একে অপরের সাথে জুড়ে একটি প্রিজমের মতো তৈরি করা হয়। এর ভেতরে থাকা রঙিন কাচের টুকরো বা চুড়ির অসংখ্য সুন্দর প্রতিবিম্বের নকশা দেখা যায়।

৮. আলোর প্রতিসরণ (Refraction of Light) কাকে বলে? [২ নম্বর]

আলোকরশ্মি এক স্বচ্ছ মাধ্যম থেকে অন্য স্বচ্ছ মাধ্যমে তির্যকভাবে প্রবেশ করার সময় দুই মাধ্যমের বিভেদতল থেকে তার গতিপথ পরিবর্তন করে (বেঁকে যায়)। এই ঘটনাকে আলোর প্রতিসরণ বলে।

৯. প্রতিসরণের দুটি সূত্র কী কী? [৩ নম্বর]

  • প্রথম সূত্র: আপতিত রশ্মি, প্রতিসৃত রশ্মি এবং দুই মাধ্যমের বিভেদতলের ওপর আপতন বিন্দুতে আঁকা অভিলম্ব সর্বদা একই সমতলে থাকে।
  • দ্বিতীয় সূত্র (স্নেলের সূত্র): দুটি নির্দিষ্ট মাধ্যম ও নির্দিষ্ট বর্ণের আলোর ক্ষেত্রে, আপতন কোণের সাইন (sine) এবং প্রতিসরণ কোণের সাইন (sine)-এর অনুপাত সর্বদা ধ্রুবক থাকে। এই ধ্রুবককে প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বলে।

১০. প্রতিসরাঙ্ক (Refractive Index) কাকে বলে? [১ নম্বর]

আলো যখন একটি মাধ্যম থেকে অন্য মাধ্যমে প্রবেশ করে, তখন আপতন কোণের সাইন ও প্রতিসরণ কোণের সাইনের অনুপাতকে প্রথম মাধ্যমের সাপেক্ষে দ্বিতীয় মাধ্যমের প্রতিসরাঙ্ক বলে। এটি আলোর বেগের পরিবর্তনের পরিমাপ।

১১. ঘন ও লঘু মাধ্যম বলতে কী বোঝায়? [২ নম্বর]

আলোর ক্ষেত্রে, যে মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক বেশি, তাকে ঘন মাধ্যম (যেমন, কাচ) এবং যে মাধ্যমের পরম প্রতিসরাঙ্ক কম, তাকে লঘু মাধ্যম (যেমন, বায়ু) বলে।

১২. আলো লঘু মাধ্যম থেকে ঘন মাধ্যমে গেলে কোন দিকে বেঁকে যায়? [১ নম্বর]

আলোকরশ্মি লঘু মাধ্যম (যেমন বায়ু) থেকে ঘন মাধ্যমে (যেমন জল বা কাচ) প্রবেশ করলে অভিলম্বের দিকে সরে আসে (কাছে চলে আসে)।

১৩. আলো ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে গেলে কোন দিকে বেঁকে যায়? [১ নম্বর]

আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে প্রবেশ করলে অভিলম্ব থেকে দূরে সরে যায়।

১৪. সংকট কোণ (Critical Angle) কাকে বলে? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে প্রতিসৃত হওয়ার সময়, যে নির্দিষ্ট আপতন কোণের জন্য প্রতিসরণ কোণের মান $90^{\circ}$ হয় (অর্থাৎ প্রতিসৃত রশ্মিটি দুই মাধ্যমের বিভেদতল ঘেঁষে চলে যায়), সেই আপতন কোণকে ওই মাধ্যমদ্বয়ের সংকট কোণ বলে।

১৫. অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন (Total Internal Reflection) কাকে বলে? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

আলোকরশ্মি ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে যাওয়ার সময় আপতন কোণের মান যদি সংকট কোণের চেয়ে বড় হয়, তবে আলোকরশ্মি প্রতিসৃত না হয়ে সম্পূর্ণভাবে প্রতিফলিত হয়ে প্রথম মাধ্যমেই (ঘন মাধ্যমে) ফিরে আসে। এই ঘটনাকে অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন বলে।

অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন লঘু মাধ্যম (বায়ু) ঘন মাধ্যম (জল) প্রতিসরণ সংকট কোণ ($90^{\circ}$) পূর্ণ প্রতিফলন

চিত্র: সংকট কোণ ও অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন।

১৬. হিরে খুব চকচকে দেখায় কেন? [২ নম্বর]

হিরের প্রতিসরাঙ্ক খুব বেশি, তাই এর সংকট কোণের মান খুব কম (মাত্র $24.5^{\circ}$)। হিরেকে এমনভাবে কাটা হয় যাতে আলো একবার প্রবেশ করলে বিভিন্ন তলে বারবার অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে। এই প্রতিফলিত আলোকরশ্মিগুলি যখন চোখ এসে পড়ে, তখন হিরেকে খুব উজ্জ্বল ও চকচকে দেখায়।

১৭. মরীচিকা (Mirage) কী? এটি কেন ঘটে? [৫ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

মরীচিকা: মরুভূমিতে বা গরমের দিনে পিচঢালা রাস্তায় চললে দূরের বস্তুর একটি উলটো, কাঁপতে থাকা প্রতিবিম্ব দেখা যায়। মনে হয় সেখানে যেন জল আছে। কাছে গেলে এই জল অদৃশ্য হয়ে যায়। আলোর এই প্রাকৃতিক भ्रमকে মরীচিকা বলে।

কারণ: মরুভূমিতে বালি-সংলগ্ন বায়ুস্তর সবচেয়ে বেশি গরম ও হালকা (লঘু) হয়। ওপরের বায়ুস্তরগুলি ক্রমশ ঠান্ডা ও ঘন হতে থাকে। দূরের কোনো গাছ থেকে আলোকরশ্মি যখন নীচের দিকে আসতে থাকে, তখন তা ঘন মাধ্যম থেকে লঘু মাধ্যমে প্রবেশ করে এবং অভিলম্ব থেকে দূরে সরতে থাকে। একসময় আপতন কোণ সংকট কোণের চেয়ে বেশি হলে, আলোকরশ্মির অভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলন ঘটে। এই প্রতিফলিত রশ্মি বেঁকে গিয়ে দর্শকের চোখে পৌঁছালে, দর্শক গাছটির একটি উলটো প্রতিবিম্ব মাটির নীচে দেখতে পায় এবং ভাবে সেখানে জল আছে।

BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu
BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu