বিষয়: আমাদের পৃথিবী
অধ্যায় ৭: মানুষের কার্যাবলি ও পরিবেশের অবনমন (নোটস)
১. হোমিওস্ট্যাটিক ব্যবস্থা (Homeostatic mechanism) কী?
প্রাকৃতিক পরিবেশের এমন একটি নিজস্ব ব্যবস্থা আছে যার মাধ্যমে পরিবেশের কোনো অংশে ক্ষতি বা পরিবর্তন হলে তা নিজে থেকেই পূরণ হয়ে যায়। পরিবেশের এই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রক্রিয়াকে হোমিওস্ট্যাটিক ব্যবস্থা বলে।
২. পরিবেশের অবনমন (Environmental Degradation) কাকে বলে?
বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে পরিবেশের সার্বিক গুণমান যখন হ্রাস পায়, তখন তাকে পরিবেশের অবনমন বলে। এর ফলে পরিবেশের ভারসাম্য ও কার্যকরী ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায় এবং পরিবেশ আর নিজে থেকে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসতে পারে না। যেমন – অতিরিক্ত অরণ্য বিনাশের ফলে ভূমিক্ষয়, বন্যা, জীববৈচিত্র্য হ্রাস ইত্যাদি ঘটে।
৩. পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশের অবনমনের মধ্যে পার্থক্য কী?
পরিবেশ দূষণ এবং অবনমন এক নয়, যদিও একে অপরের সাথে সম্পর্কিত।
- পরিবেশ দূষণ: হলো পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের (জল, বায়ু, মাটি) দূষিত হওয়া। যেমন – জলে আর্সেনিক মেশা।
- পরিবেশের অবনমন: হলো পরিবেশের সামগ্রিক গুণমানের হ্রাস পাওয়া, যার ফলে তার ভারসাম্য নষ্ট হয়।
প্রকৃতপক্ষে, পরিবেশ দূষণ দীর্ঘস্থায়ী হলে তা পরিবেশের অবনমন ঘটায়।
৪. পরিবেশ অবনমনের কারণগুলি কী কী?
পরিবেশ অবনমনের দুটি প্রধান কারণ:
- ক) প্রাকৃতিক কারণ: ঝড়, বন্যা, খরা, ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, সুনামি, ধস ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে পরিবেশের অবনমন ঘটে।
- খ) মনুষ্যসৃষ্ট কারণ: জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, শিল্পায়ন, অরণ্যচ্ছেদন, আধুনিক কৃষিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার, সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহার ইত্যাদি।
৫. ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনা (Bhopal Gas Tragedy) কী?
১৯৮৪ সালে মধ্যপ্রদেশের ভোপালে ইউনিয়ন কার্বাইড কীটনাশক কারখানা থেকে বিষাক্ত MIC (মিথাইল আইসো সায়নাইড) গ্যাস লিক হয়ে প্রায় ৪০০০ মানুষ ও অসংখ্য পশুপাখির মৃত্যু হয়। এটি ভারতের অন্যতম ভয়াবহ শিল্প বিপর্যয়।
৬. চিপকো আন্দোলন (Chipko Movement) কী?
১৯৭৩ সালে উত্তরাখণ্ডের গাড়োয়াল অঞ্চলে অরণ্যকে রক্ষা করার জন্য স্থানীয় অধিবাসীরা এক অহিংস আন্দোলন শুরু করেন। ঠিকাদাররা গাছ কাটতে এলে তারা গাছকে জড়িয়ে ধরে (হিন্দিতে ‘চিপক যাও’) গাছ কাটা বন্ধ করেন। সুন্দরলাল বহুগুনা এই আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন।
৭. স্থিতিশীল উন্নয়ন (Sustainable Development) কাকে বলে?
স্থিতিশীল উন্নয়ন হলো এমন এক ধরনের উন্নয়নের পদ্ধতি যার মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতের মানব সমাজের উন্নয়নের অগ্রগতিও অব্যাহত রাখা হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো – উন্নয়নও করতে হবে আবার পরিবেশকেও বাঁচাতে হবে। এতে প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
চিত্র: স্থিতিশীল উন্নয়ন পরিবেশ, সমাজ ও অর্থনীতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।
৮. ‘সবুজ বিপ্লব’-এর দুটি নেতিবাচক ফল লেখো।
পাঞ্জাব-হরিয়ানায় সবুজ বিপ্লবের ফলে পরিবেশের অবনমন ঘটেছে। যেমন:
- অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারে জল ও মাটি দূষিত হয়েছে এবং মাটির লবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
- অতিরিক্ত ভৌমজল উত্তোলনের ফলে জলস্তর নীচে নেমে গেছে।
৯. পূর্ব কলকাতার জলাভূমির পরিবেশের অবনমন ঘটছে কেন?
- জলাভূমি বুজিয়ে বেআইনিভাবে বহুতল বাড়ি ও নির্মাণকাজ করা হচ্ছে।
- শহরের আবর্জনা ফেলার ফলে জল, মাটি ও বায়ু দূষিত হচ্ছে।
- গাছ কাটা ও চাষের জমিতে বসতি নির্মাণের ফলে বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
১০. পরিবেশের অবনমন রোধে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত?
পরিবেশের অবনমন নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায়গুলি হলো:
- স্থিতিশীল উন্নয়ন: পরিবেশের ক্ষতি না করে উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
- অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহার: কয়লা, খনিজ তেলের বদলে পরিবেশবান্ধব সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদির ব্যবহার বাড়ানো।
- সম্পদের পুনর্ব্যবহার (Recycle/Reuse): প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় কমানো এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ানো।
- অরণ্য সংরক্ষণ ও বৃক্ষরোপণ: অরণ্য বিনাশ বন্ধ করা এবং বৃক্ষচ্ছেদনের বদলে বৃক্ষরোপণকে গুরুত্ব দেওয়া।
- জনসচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবেশের গুরুত্ব সম্পর্কে শিক্ষা ও প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা।
- কঠোর আইন: পরিবেশ দূষণ ও অবনমন সংক্রান্ত বিষয়ে কঠোর সরকারি আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা।