প্রকল্প পত্র: শিলা (অধ্যায় ৩)
Processing…

বিষয়: আমাদের পৃথিবী

অধ্যায় ৩: শিলা (নোটস)

১. শিলা (Rock) কী? [২ নম্বর]

শিলা হলো প্রকৃতিতে প্রাপ্ত এক বা একাধিক খনিজের সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণ। পৃথিবী যে শক্ত আবরণে ঢাকা, তাই হলো শিলা।

২. খনিজ (Mineral) কী? [২ নম্বর]

খনিজ হলো এক বা একাধিক অজৈব মৌলিক পদার্থের যৌগ, যা দিয়ে শিলা গঠিত হয়। প্রতিটি খনিজের নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংযুক্তি ও পারমাণবিক গঠন রয়েছে। যেমন – কোয়ার্টজ, ফেল্ডসপার।

৩. শিলাকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী? [২ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

সৃষ্টি ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে শিলাকে তিনটি পরিবারে ভাগ করা যায়:

  1. আগ্নেয় শিলা (Igneous Rock)
  2. পাললিক শিলা (Sedimentary Rock)
  3. রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock)

৪. আগ্নেয় শিলা (Igneous Rock) বা প্রাথমিক শিলা কাকে বলে? [২ নম্বর]

পৃথিবী সৃষ্টির সময় উত্তপ্ত ও তরল অবস্থা (ম্যাগমা) থেকে ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে ভূত্বকের মধ্যে বা উপরে প্রথম যে কঠিন শিলার সৃষ্টি হয়, তাকে আগ্নেয় শিলা বলে। পৃথিবীতে প্রথম সৃষ্টি হওয়ায় একে ‘প্রাথমিক শিলা’ও বলে।

৫. আগ্নেয় শিলা কয় প্রকার ও কী কী? [২ নম্বর]

উৎপত্তি অনুসারে আগ্নেয় শিলা দুই প্রকার:

  • নিঃসারী আগ্নেয় শিলা (Extrusive): লাভা ভূপৃষ্ঠের বাইরে এসে দ্রুত জমে তৈরি হয়। যেমন – ব্যাসল্ট।
  • উদ্বেধী আগ্নেয় শিলা (Intrusive): ম্যাগমা ভূ-অভ্যন্তরেই ধীরে ধীরে জমে তৈরি হয়। যেমন – গ্রানাইট।

৬. নিঃসারী ও উদ্বেধী আগ্নেয় শিলার পার্থক্য লেখো। [৩ নম্বর]

বিষয় নিঃসারী শিলা উদ্বেধী শিলা
সৃষ্টি ম্যাগমা (লাভা) ভূপৃষ্ঠের বাইরে এসে দ্রুত শীতল ও কঠিন হয়ে সৃষ্টি হয়। ম্যাগমা ভূ-অভ্যন্তরে ধীরে ধীরে শীতল ও কঠিন হয়ে সৃষ্টি হয়।
শীতল হওয়ার হার দ্রুত শীতল হয়। ধীরে ধীরে শীতল হয়।
দানার প্রকৃতি দানাগুলি খুব সূক্ষ্ম হয় (যেমন – ব্যাসল্ট)। দানাগুলি বড় বা স্থূল হয় (যেমন – গ্রানাইট)।
আগ্নেয় শিলার প্রকারভেদ ম্যাগমা নিঃসারী শিলা (সূক্ষ্ম দানা) উদ্বেধী শিলা (স্থূল দানা)

চিত্র: নিঃসারী (লাভা) ও উদ্বেধী (ম্যাগমা) আগ্নেয় শিলা।

৭. উদ্বেধী শিলা কয় প্রকার ও কী কী? [২ নম্বর]

  • উপপাতালিক শিলা (Hypabyssal): ফাটল বা ছিদ্রপথে ধীরে ধীরে জমে তৈরি হয়। যেমন – ডোলেরাইট।
  • পাতালিক শিলা (Plutonic): ভূ-অভ্যন্তরের অনেক গভীরে অতি ধীরে ধীরে জমে তৈরি হয়। যেমন – গ্রানাইট।

৮. আগ্নেয় শিলার বিশেষত্ব / বৈশিষ্ট্য কী? [৩ নম্বর]

  • এই শিলা খুব শক্ত, ভারী ও ঘন।
  • কেলাসের (Crystal) মতো গঠন দেখা যায়।
  • এই শিলায় জীবাশ্ম (Fossil) দেখা যায় না।
  • ক্ষয় প্রতিরোধের ক্ষমতা খুব বেশি।

৯. কেলাস (Crystal) কী? [২ নম্বর]

বিভিন্ন খনিজের সাথে জলের অণু নির্দিষ্ট বিন্যাসে সংযুক্ত হয়ে যে স্বচ্ছ ও উজ্জ্বল জ্যামিতিক আকার গঠন করে, তাকে কেলাস বলে। এটি চিনির দানা বা মিছরির মতো দেখতে হয়।

১০. গ্রানাইট (Granite) ও ব্যাসল্ট (Basalt) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো। [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

বিষয় গ্রানাইট ব্যাসল্ট
প্রকার উদ্বেধী (পাতালিক) শিলা। নিঃসারী শিলা।
ভূত্বক গঠন মহাদেশীয় ভূত্বক (সিয়াল) গঠন করে। মহাসাগরীয় ভূত্বক (সিমা) গঠন করে।
রং হালকা সাদা, ধূসর বা গোলাপি। গাঢ় ধূসর থেকে কালো।
দানার প্রকৃতি স্থূল বা বড় দানাযুক্ত। সূক্ষ্ম দানাযুক্ত।
ভূমিরূপ গোলাকার ভূমিরূপ তৈরি করে (যেমন – রাঁচি মালভূমি)। চ্যাপ্টা ভূমিরূপ তৈরি করে (যেমন – ডেকানট্র্যাপ)।

১১. পাললিক শিলা (Sedimentary Rock) কাকে বলে? [২ নম্বর]

আগ্নেয় শিলা বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি (নদী, বায়ু, হিমবাহ) দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত ও পরিবাহিত হয়ে সমুদ্র, হ্রদ বা নদীর তলদেশে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। পরে উপরের স্তরের চাপে ও তাপে নিচের পলি জমাট বেঁধে যে শিলার সৃষ্টি হয়, তাকে পাললিক শিলা বলে। যেমন – বেলেপাথর, চুনাপাথর।

১২. পাললিক শিলার বিশেষত্ব / বৈশিষ্ট্য কী? [৩ নম্বর]

  • এই শিলায় স্তরায়ণ (Stratification) বা স্তর দেখা যায়।
  • একমাত্র এই শিলাতেই জীবাশ্ম (Fossil) দেখা যায়।
  • এই শিলা সছিদ্র এবং ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়।
  • কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এই শিলায় পাওয়া যায়।

১৩. জীবাশ্ম (Fossil) কী? কোন শিলায় দেখা যায়? [২ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

পাললিক শিলা সৃষ্টির সময় কখনো কখনো সামুদ্রিক উদ্ভিদ বা প্রাণী তার মধ্যে চাপা পড়ে যায়। পরে ওই উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহ প্রস্তরীভূত হয়ে তার ছাপ শিলার মধ্যে থেকে যায়। একেই জীবাশ্ম বলে।

জীবাশ্ম শুধুমাত্র পাললিক শিলায় দেখা যায়।

জীবাশ্ম গঠন পলল স্তর জীবাশ্ম (Fossil)

চিত্র: পাললিক শিলার স্তরে জীবাশ্মের অবস্থান।

১৪. পাললিক শিলার শ্রেণিবিভাগ করো। [২ নম্বর]

উৎপত্তি অনুসারে পাললিক শিলা দুই প্রকার:

  • সংঘাত শিলা (Clastic): প্রাচীন শিলা চূর্ণ হয়ে জমাট বেঁধে তৈরি। যেমন – কংগ্লোমারেট।
  • অসংঘাত শিলা (Non-clastic): রাসায়নিক বা জৈবিক উপায়ে তৈরি। যেমন – চুনাপাথর, লবণ শিলা।

১৫. যান্ত্রিক উপায়ে গঠিত পাললিক শিলার শ্রেণিবিভাগ করো। [৩ নম্বর]

দানার ব্যাস অনুসারে যান্ত্রিক পাললিক শিলা তিন প্রকার:

  • প্রস্তরময় (Rudaceous): ২ মিমি-এর বেশি ব্যাসযুক্ত দানা। যেমন – কংগ্লোমারেট।
  • বালুকাময় (Arenaceous): ০.০৬ মিমি থেকে ২ মিমি ব্যাসযুক্ত দানা। যেমন – বেলেপাথর।
  • কর্দমময় (Argillaceous): ০.০৬ মিমি-এর কম ব্যাসযুক্ত দানা। যেমন – কাদাপাথর, শেল।

১৬. রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic Rock) কাকে বলে? [২ নম্বর]

আগ্নেয় ও পাললিক শিলা ভূ-অভ্যন্তরের প্রচণ্ড চাপ, তাপ বা রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পুরোনো ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম হারিয়ে সম্পূর্ণ নতুন ধর্ম বিশিষ্ট শিলায় পরিণত হলে, তাকে রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন – চুনাপাথর থেকে মার্বেল।

১৭. শিলার রূপান্তর কীভাবে হয়? [২ নম্বর]

শিলার রূপান্তর তিন ভাবে হতে পারে:

  1. তাপের ফলে (স্পর্শ রূপান্তর): যেমন – চুনাপাথর থেকে মার্বেল।
  2. চাপের ফলে (আঞ্চলিক রূপান্তর): যেমন – শেল থেকে স্লেট।
  3. রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে।

১৮. রূপান্তরিত শিলার বিশেষত্ব / বৈশিষ্ট্য কী? [৩ নম্বর]

  • এই শিলা আগের থেকে অনেক বেশি কঠিন, মসৃণ ও চকচকে হয়।
  • এই শিলা কেলাসযুক্ত হতে পারে (যেমন – নিস)।
  • পাললিক শিলা রূপান্তরিত হলে তার ভঙ্গুরতা কমে যায়।
  • এই শিলায় জীবাশ্ম থাকলে তা প্রচণ্ড তাপে ও চাপে নষ্ট হয়ে যায়।

১৯. কয়েকটি শিলার রূপান্তরিত রূপ লেখো (সারণি)। [৫ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

আদি শিলা (আগ্নেয়/পাললিক) রূপান্তরিত রূপ
গ্রানাইট (আগ্নেয়) নিস (Gneiss)
ব্যাসল্ট (আগ্নেয়) অ্যাম্ফিবোলাইট (Amphibolite)
বেলেপাথর (পাললিক) কোয়ার্টজাইট (Quartzite)
চুনাপাথর (পাললিক) মার্বেল (Marble)
শেল / কাদাপাথর (পাললিক) স্লেট (Slate)
পিট কয়লা (পাললিক) গ্রাফাইট (Graphite)

২০. স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট কী? [৩ নম্বর]

চুনাপাথরযুক্ত অঞ্চলে (কার্স্ট ভূমিরূপ) গুহার ছাদ থেকে ঝুলতে থাকা চুনাপাথরের দণ্ডকে স্ট্যালাকটাইট (Stalactite) এবং গুহার মেঝে থেকে ওপরের দিকে জমে ওঠা চুনাপাথরের দণ্ডকে স্ট্যালাগমাইট (Stalagmite) বলে।

স্ট্যালাকটাইট ও স্ট্যালাগমাইট স্ট্যালাকটাইট স্ট্যালাগমাইট

চিত্র: কার্স্ট গুহায় স্ট্যালাকটাইট (ছাদ থেকে) ও স্ট্যালাগমাইট (মেঝে থেকে)।

২১. শিলাচক্র (Rock Cycle) কাকে বলে? সচিত্র বর্ণনা দাও। [৫ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

প্রকৃতিতে শিলার উৎপত্তি এবং এক শিলা থেকে অন্য শিলায় রূপান্তর একটি নির্দিষ্ট নিয়মে চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে চলেছে। এই প্রক্রিয়াটি হলো শিলাচক্র।

  • ধাপ ১: ভূ-অভ্যন্তরের গলিত ম্যাগমা শীতল ও কঠিন হয়ে আগ্নেয় শিলা তৈরি করে।
  • ধাপ ২: আগ্নেয় শিলা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে এবং পলি জমে পাললিক শিলা তৈরি করে।
  • ধাপ ৩: আগ্নেয় ও পাললিক শিলা প্রচণ্ড তাপ ও চাপে রূপান্তরিত শিলা তৈরি করে।
  • ধাপ ৪: এই তিন প্রকার শিলাই ভূ-আন্দোলনে ভূগর্ভে প্রবেশ করলে আবার গলে গিয়ে ম্যাগমায় পরিণত হয় এবং চক্রটি চলতে থাকে।
শিলাচক্র (Rock Cycle) ম্যাগমা আগ্নেয় শিলা পাললিক শিলা রূপান্তরিত শিলা শীতলীকরণ ক্ষয় ও সঞ্চয় তাপ ও চাপ গলন তাপ ও চাপ

চিত্র: শিলাচক্র।

২২. ভূমিরূপের উপর শিলার প্রভাব উদাহরণসহ লেখো। [৩ নম্বর]

  • গ্রানাইট শিলা: এই শিলা খুব শক্ত ও ক্ষয় প্রতিরোধী। এর দ্বারা গঠিত ভূমিরূপ সাধারণত গোলাকার হয় (যেমন – রাঁচি মালভূমি)।
  • ব্যাসল্ট শিলা: এই শিলা কঠিন হলেও এতে ফাটল দেখা যায়। এর দ্বারা গঠিত ভূমিরূপ চ্যাপ্টা মাথা বিশিষ্ট হয় (যেমন – দাক্ষিণাত্যের ডেকানট্র্যাপ)।
  • চুনাপাথর: এই শিলা জলে দ্রবীভূত হয়, তাই এই অঞ্চলে গুহা, স্ট্যালাকটাইট, স্ট্যালাগমাইট প্রভৃতি ভূমিরূপ (কার্স্ট ভূমিরূপ) সৃষ্টি হয়।

BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu
BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu