প্রকল্প পত্র: অস্থিত পৃথিবী (অধ্যায় ২)
Processing…

বিষয়: আমাদের পৃথিবী

অধ্যায় ২: অস্থিত পৃথিবী (নোটস)

১. ‘মহীসঞ্চরণ তত্ত্ব’ (Continental Drift Theory) -এর প্রবক্তা কে? [১ নম্বর]

আলফ্রেড ওয়েগনার (Alfred Wegener)।

২. প্যানজিয়া (Pangaea) কী? [১ নম্বর]

আলফ্রেড ওয়েগনারের মতে, প্রায় ৩০ কোটি বছর আগে পৃথিবীর সমস্ত স্থলভাগ একটি বিশাল ভূখণ্ডরূপে (প্যানজিয়া) অবস্থান করত।

৩. ‘পাত সংস্থান তত্ত্ব’ (Plate Tectonic Theory) কী? [৩ নম্বর]

ভূবিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীর ভূত্বক (শিলামণ্ডল) কতকগুলো শক্ত ও কঠিন খণ্ডে বিভক্ত। এই খণ্ডগুলিকে ‘পাত’ (Plate) বলে। এই পাতগুলি গুরুমণ্ডলের উপরের অর্ধ-তরল অ্যাসথেনোস্ফিয়ারের উপর খুব ধীর গতিতে সঞ্চরণশীল। এই সামগ্রিক তত্ত্বকে ‘পাত সংস্থান তত্ত্ব’ বলে।

৪. প্রধান পাত কয়টি ও কী কী? [২ নম্বর]

পৃথিবীতে মোট ৬টি বড়ো পাত রয়েছে:

  • ১. ইউরেশিয় পাত
  • ২. ইন্দো-অস্ট্রেলিয় পাত
  • ৩. আমেরিকা পাত
  • ৪. প্রশান্ত মহাসাগরীয় পাত
  • ৫. আফ্রিকা পাত
  • ৬. আন্টার্কটিকা পাত

৫. পাত সঞ্চালনের কারণ কী? [২ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

অ্যাসথেনোস্ফিয়ারে সৃষ্ট পরিচলন স্রোত (Convection Current) -ই হলো পাত সঞ্চালনের প্রধান কারণ।

৬. পাতের সীমানা কয় প্রকার ও কী কী? [২ নম্বর]

পাতের সীমানা প্রধানত তিন প্রকার:

  1. অপসারী পাত সীমানা (Divergent)
  2. অভিসারী পাত সীমানা (Convergent)
  3. নিরপেক্ষ পাত সীমানা (Neutral / Transform)

৭. অপসারী (গঠনকারী) পাত সীমানা কাকে বলে? এর ফলে কী গঠিত হয়? [৩ নম্বর]

যখন দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়, তাকে অপসারী পাত সীমানা বলে। এর ফলে সমুদ্রের তলদেশে যে ফাঁক সৃষ্টি হয়, তা দিয়ে ম্যাগমা বেরিয়ে এসে শীতল ও কঠিন হয়ে নতুন ভূত্বক ও ‘মধ্য-সামুদ্রিক শৈলশিরা’ (Mid-Oceanic Ridge) গঠন করে।

অপসারী পাত সীমানা পাত ১ পাত ২ ম্যাগমা শৈলশিরা

চিত্র: অপসারী (গঠনকারী) পাত সীমানা।

৮. অভিসারী (বিনাশকারী) পাত সীমানা কাকে বলে? এর ফলে কী গঠিত হয়? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

যখন দুটি পাত পরস্পরের দিকে অগ্রসর হয় ও সংঘর্ষ ঘটায়, তাকে অভিসারী পাত সীমানা বলে। এর ফলে ভারী পাতটি হালকা পাতের নিচে প্রবেশ করে (নিমজ্জন) এবং ভূত্বকের বিনাশ ঘটে। এর ফলে ‘সমুদ্রখাত’, ‘ভঙ্গিল পর্বত’ ও ‘আগ্নেয় দ্বীপপুঞ্জ’ সৃষ্টি হয়।

অভিসারী পাত সীমানা মহাদেশীয় পাত মহাসাগরীয় পাত (ভারী) সমুদ্রখাত ভঙ্গিল পর্বত

চিত্র: অভিসারী (বিনাশকারী) পাত সীমানা।

৯. হিমালয় পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে কীভাবে? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

ইউরেশিয় পাত (মহাদেশীয়) ও ভারতীয় পাতের (মহাদেশীয়) মাঝের টেথিস সাগরের পলি ভাঁজ খেয়ে হিমালয় পর্বতের সৃষ্টি হয়েছে। এটি একটি অভিসারী পাত সীমানার উদাহরণ।

১০. নিরপেক্ষ পাত সীমানা কাকে বলে? এর ফলে কী গঠিত হয়? [৩ নম্বর]

যখন দুটি পাত পরস্পরকে ঘর্ষণ করে পাশাপাশি অগ্রসর হয়, তাকে নিরপেক্ষ পাত সীমানা বলে। এখানে পাতের ধ্বংস বা সৃষ্টি হয় না। এর ফলে ভূমিকম্প ও চ্যুতি (Fault) সৃষ্টি হয়। যেমন – ক্যালিফোর্নিয়ার সান আন্দ্রিজ চ্যুতি।

নিরপেক্ষ পাত সীমানা পাত ১ পাত ২ চ্যুতি রেখা

চিত্র: নিরপেক্ষ পাত সীমানা। পাত দুটি পাশাপাশি অগ্রসর হয়।

১১. অগ্ন্যুদ্গম (Volcanism) কী? [২ নম্বর]

ভূ-অভ্যন্তরের গলিত সান্দ্র ম্যাগমা, গ্যাস, জলীয়বাষ্প কোনো ফাটল বা গহ্বরের মধ্য দিয়ে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া হলো অগ্ন্যুদ্গম।

১২. আগ্নেয়গিরি (Volcano) কী? [২ নম্বর]

অগ্ন্যুৎপাতের সময় উৎক্ষিপ্ত পদার্থ (লাভা, ভস্ম) ফাটলের চারপাশে জমা হয়ে যে শঙ্কু আকৃতির পর্বতের আকার ধারণ করে, তাকে আগ্নেয়গিরি বলে। যেমন – জাপানের ফুজিয়ামা।

১৩. সক্রিয়তার ভিত্তিতে আগ্নেয়গিরির শ্রেণিবিভাগ করো। [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

  1. সক্রিয় আগ্নেয়গিরি (Active): যেগুলিতে প্রায়ই অগ্ন্যুৎপাত হয়। যেমন – ইতালির স্ট্রম্বোলী, ভারতের ব্যারেন।
  2. সুপ্ত আগ্নেয়গিরি (Dormant): যেগুলি অগ্ন্যুৎপাতের পর দীর্ঘকাল নিষ্ক্রিয় থাকে, কিন্তু ভবিষ্যতে হতে পারে। যেমন – জাপানের ফুজিয়ামা।
  3. মৃত আগ্নেয়গিরি (Extinct): যেগুলিতে ভবিষ্যতে অগ্ন্যুৎপাতের সম্ভাবনা প্রায় নেই। যেমন – মায়ানমারের পোপো।

১৪. ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় অগ্নিবলয়’ (Pacific Ring of Fire) কী? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

পৃথিবীর অধিকাংশ জীবন্ত আগ্নেয়গিরি প্রশান্ত মহাসাগরকে বলয়ের মতো ঘিরে রেখেছে। এই অঞ্চলটি পৃথিবীর ৭০% ভূমিকম্পপ্রবণ। তাই একে ‘প্রশান্ত মহাসাগরীয় অগ্নিবলয়’ বলা হয়।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় অগ্নিবলয় প্রশান্ত মহাসাগর এশিয়া অস্ট্রেলিয়া উত্তর আমেরিকা দক্ষিণ আমেরিকা অগ্নিবলয় (আগ্নেয়গিরি)

চিত্র: প্রশান্ত মহাসাগরীয় অগ্নিবলয়।

১৫. ভূমিকম্প (Earthquake) কাকে বলে? [২ নম্বর]

ভূ-অভ্যন্তরে কোনো সঞ্চিত শক্তি হঠাৎ মুক্ত হলে ভূত্বক কেঁপে ওঠে। ভূত্বকের এই আকস্মিক কম্পনকে ভূমিকম্প বলে।

১৬. ভূমিকম্পের কেন্দ্র (Focus) ও উপকেন্দ্র (Epicentre) কাকে বলে? [২ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

  • কেন্দ্র (Focus): ভূপৃষ্ঠের নীচে ভূ-অভ্যন্তরে যে স্থান থেকে ভূমিকম্পের উদ্ভব হয়, তা হলো ভূমিকম্পের কেন্দ্র।
  • উপকেন্দ্র (Epicentre): কেন্দ্র থেকে ঠিক উল্লম্ব দিকে ভূপৃষ্ঠের যে বিন্দুতে প্রথম কম্পন পৌঁছায়, তা হলো উপকেন্দ্র। উপকেন্দ্রেই কম্পনের তীব্রতা সর্বাধিক হয়।
ভূমিকম্পের কেন্দ্র ও উপকেন্দ্র উপকেন্দ্র কেন্দ্র

চিত্র: ভূমিকম্পের কেন্দ্র (Focus) ও উপকেন্দ্র (Epicentre)।

১৭. ভূমিকম্পের তরঙ্গ কয় প্রকার ও কী কী? [৩ নম্বর]

ভূ-কম্পন তরঙ্গ তিন ধরনের হয়:

  • প্রাথমিক তরঙ্গ (P wave): সবচেয়ে দ্রুতগামী; কঠিন, তরল, গ্যাসীয় সব মাধ্যমেই যায়।
  • দ্বিতীয় পর্যায়ের তরঙ্গ (S wave): মাঝারি গতির; শুধু কঠিন মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে যায়।
  • পৃষ্ঠ তরঙ্গ (L wave): ধীর গতিসম্পন্ন; ভূপৃষ্ঠ বরাবর ছড়িয়ে পড়ে এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি ঘটায়।

১৮. সিসমোগ্রাফ (Seismograph) ও সিসমোগ্রাম (Seismogram) কী? [২ নম্বর]

  • সিসমোগ্রাফ: যে যন্ত্রের সাহায্যে ভূমিকম্পের তীব্রতা ও উৎপত্তি পরিমাপ করা হয়, তাকে সিসমোগ্রাফ বা ভূকম্প-লিখ যন্ত্র বলে।
  • সিসমোগ্রাম: সিসমোগ্রাফ যন্ত্রে ভূমিকম্পের তরঙ্গের যে আঁকাবাঁকা লেখচিত্রটি তৈরি হয়, তাকে সিসমোগ্রাম বলে।

১৯. রিখটার স্কেল (Richter Scale) কী? [২ নম্বর]

রিখটার স্কেল হলো ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বা তীব্রতা পরিমাপের স্কেল। এর সূচক মাত্রা ০-১০। রিখটার স্কেলে ‘৬’ এর বেশি মাত্রার ভূমিকম্পে বিরাট ক্ষয়ক্ষতি হয়।

২০. সুনামি (Tsunami) কী? [২ নম্বর]

সমুদ্রের তলদেশে বা উপকূল অঞ্চলে ভূমিকম্পের ফলে যে বিশাল উচ্চতার সামুদ্রিক ঢেউ প্রবল শক্তিতে উপকূল অঞ্চলে আছড়ে পড়ে, তাকে সুনামি বলে। ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে ভয়ংকর সুনামি হয়েছিল।

২১. সচিত্রভাবে বিভিন্ন প্রকার পাত সীমানার বর্ণনা দাও। [৫ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

পাতের সঞ্চালনের ফলে তিন প্রকার পাত সীমানা সৃষ্টি হয়:

  1. অপসারী সীমানা: যখন দুটি পাত পরস্পর থেকে দূরে সরে যায়। এর ফলে ম্যাগমা বেরিয়ে এসে নতুন ভূত্বক ও মধ্য-সামুদ্রিক শৈলশিরা তৈরি করে। একে ‘গঠনকারী’ সীমানা বলে।
  2. অভিসারী সীমানা: যখন দুটি পাত পরস্পরের দিকে এগিয়ে এসে সংঘর্ষ ঘটায়। ভারী পাতটি হালকা পাতের নিচে নিমজ্জিত হয় ও ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এর ফলে সমুদ্রখাত, ভঙ্গিল পর্বত ও আগ্নেয়গিরির সৃষ্টি হয়। একে ‘বিনাশকারী’ সীমানা বলে।
  3. নিরপেক্ষ সীমানা: যখন দুটি পাত পরস্পর ঘর্ষণ করে পাশাপাশি অগ্রসর হয়। এখানে পাত সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না, কিন্তু তীব্র ভূমিকম্পযুক্ত চ্যুতি (Fault) তৈরি হয়।
তিন প্রকার পাত সীমানা ১. অপসারী (গঠনকারী) ২. অভিসারী (বিনাশকারী) ৩. নিরপেক্ষ

চিত্র: তিন প্রকার পাত সীমানা।

২২. ভূমিকম্পের সময় কী কী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত (বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা)? [৫ নম্বর]

ভূমিকম্পের নির্দিষ্ট পূর্বাভাস দেওয়া যায় না, তাই পূর্বপ্রস্তুতি ও বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা জরুরি:

  • ভূমিকম্প চলাকালীন:
    • বাড়ি বা স্কুল থেকে বেরিয়ে খোলা জায়গায় চলে যাওয়া।
    • বেরোনো সম্ভব না হলে, শক্ত টেবিল বা আসবাবের তলায় আশ্রয় নেওয়া।
    • লিফ্‌ট, সিঁড়ি বা ঝুল বারান্দা এড়িয়ে চলা।
  • প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা:
    • ভূমিকম্প প্রতিরোধী বাড়িঘর নির্মাণ করা।
    • জরুরিকালীন কিট (জল, শুকনো খাবার, ওষুধ) গুছিয়ে রাখা।
    • বাড়ির দুর্বল অংশগুলি চিহ্নিত করে মেরামত করা।

BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu
BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu