প্রকল্প পত্র: ৫ নম্বরের সাজেশন (সকল অধ্যায়)
Processing…

বিষয়: আমাদের পৃথিবী

অধ্যায়-ভিত্তিক ৫ নম্বরের প্রশ্নাবলী (সাজেশন)

অধ্যায় ১: পৃথিবীর অন্দরমহল

১. পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগের স্তরবিন্যাস চিত্রসহ বর্ণনা করো। [৫ নম্বর]

ভূমিকম্প তরঙ্গের গতিবিধি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর অভ্যন্তরকে প্রধান তিনটি স্তরে ভাগ করেছেন। যথা:

  1. ভূত্বক (Crust): পৃথিবীর সবচেয়ে বাইরের স্তর, যা গড়ে প্রায় ৩০ কিমি পুরু। এটি দুটি অংশ নিয়ে গঠিত:
    • সিয়াল (SIAL): মহাদেশীয় ভূত্বক, যা সিলিকন (Si) ও অ্যালুমিনিয়াম (Al) দ্বারা গঠিত এবং গ্রানাইট শিলায় তৈরি।
    • সিমা (SIMA): মহাসাগরীয় ভূত্বক, যা সিলিকন (Si) ও ম্যাগনেসিয়াম (Mg) দ্বারা গঠিত এবং ব্যাসল্ট শিলায় তৈরি।
  2. গুরুমণ্ডল (Mantle): ভূত্বকের নীচে প্রায় ২,৯০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত স্তর। এর প্রধান উপাদান লোহা, নিকেল, ক্রোমিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও সিলিকন। এর দুটি অংশ:
    • ক্রোফেসিমা: উপরের অংশ (ক্রোমিয়াম, লোহা, সিলিকন, ম্যাগনেশিয়াম)।
    • নিফেসিমা: নীচের অংশ (নিকেল, লোহা, সিলিকন, ম্যাগনেশিয়াম)। গুরুমণ্ডলের উপরিভাগে সান্দ্র, অর্ধ-তরল অ্যাস্থেনোস্ফিয়ার স্তর অবস্থিত।
  3. কেন্দ্রমণ্ডল (Core): গুরুমণ্ডলের নীচে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত (প্রায় ৩,৫০০ কিমি পুরু) বিস্তৃত স্তর। এটি নিকেল (Ni) ও লোহা (Fe) দিয়ে তৈরি বলে একে ‘নিফে’ (Nife) বলে। এর দুটি অংশ:
    • বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল: এটি অর্ধ-তরল বা সান্দ্র অবস্থায় আছে।
    • অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল: প্রচণ্ড চাপের ফলে এটি কঠিন অবস্থায় আছে।
পৃথিবীর স্তরবিন্যাস অন্তঃকেন্দ্রমণ্ডল বহিঃকেন্দ্রমণ্ডল গুরুমণ্ডল ভূত্বক

চিত্র: পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগের স্তরবিন্যাস।

২. ভূ-অভ্যন্তর সম্পর্কে আমরা কী কী উপায়ে জানতে পারি? [৫ নম্বর]

পৃথিবীর অভ্যন্তর সম্পর্কে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব। তাই বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন পরোক্ষ উপায়ের উপর নির্ভর করেন:

  • ভূমিকম্প তরঙ্গ: এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। ভূমিকম্পের P-তরঙ্গ কঠিন, তরল সব মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে যায়, কিন্তু S-তরঙ্গ তরল মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে যেতে পারে না। এই তরঙ্গগুলির গতিবিধি ও দিক পরিবর্তন বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ভূ-অভ্যন্তরের বিভিন্ন স্তরের ঘনত্ব ও অবস্থা (কঠিন/তরল) জানতে পারেন।
  • আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত: অগ্ন্যুৎপাতের সময় পৃথিবীর গভীর থেকে যে উত্তপ্ত, গলিত ম্যাগমা বা লাভা বেরিয়ে আসে, তা পরীক্ষা করে ভূ-অভ্যন্তরের উপাদান ও উষ্ণতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
  • ঘনত্ব: পৃথিবীর পৃষ্ঠের গড় ঘনত্ব (২.৬-৩.৩ গ্রাম/ঘন সেমি) আর পৃথিবীর মোট গড় ঘনত্ব (৫.৫ গ্রাম/ঘন সেমি) এক নয়। এর থেকে বোঝা যায় যে পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকের পদার্থগুলি অনেক বেশি ভারী ও ঘন (প্রায় ১১-১৩ গ্রাম/ঘন সেমি)।
  • চাপ ও তাপ: পৃথিবীর অভ্যন্তরে প্রতি ৩৩ মিটার গভীরতায় প্রায় ১° সেলসিয়াস করে তাপমাত্রা বাড়ে। এই হিসাব থেকে কেন্দ্রের তাপ ও চাপের অবস্থা অনুমান করা যায়, যা পদার্থের অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে।
  • খনি: পৃথিবীর গভীরতম খনিগুলি (যেমন – রবিনসন ডীপ) ৩-৪ কিমি গভীর। এই খনিগুলি থেকে সরাসরি ভূত্বকের শিলা ও তাপ সম্পর্কে জানা যায়।

অধ্যায় ২: অস্থিত পৃথিবী

৩. পাত সংস্থান তত্ত্ব (Plate Tectonic Theory) অনুসারে তিন প্রকার পাত সীমানার চিত্রসহ বর্ণনা দাও। [৫ নম্বর]

ভূবিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীর ভূত্বক (শিলামণ্ডল) কতগুলি শক্ত, কঠিন খণ্ডে বিভক্ত, যাদের ‘পাত’ বলে। এই পাতগুলি অ্যাস্থেনোস্ফিয়ারের উপর ভাসমান অবস্থায় সঞ্চরণশীল। পাতের এই সঞ্চরণের ফলে প্রধানত তিন প্রকার পাত সীমানা সৃষ্টি হয়:

  1. প্রতিসারী (বা অপসারী) পাত সীমানা: যখন দুটি পাত পরিচলন স্রোতের প্রভাবে একে অপরের থেকে দূরে সরে যায়, তখন তাকে প্রতিসারী পাত সীমানা বলে। এর ফলে সমুদ্রের নীচে ফাটল সৃষ্টি হয় এবং ম্যাগমা বেরিয়ে এসে নতুন ভূত্বক ও মধ্য-সামুদ্রিক শৈলশিরা (Mid-Oceanic Ridge) গঠন করে। যেমন – আটলান্টিক মহাসাগরের শৈলশিরা। একে ‘গঠনকারী পাত সীমানা’ বলে।
  2. অভিসারী পাত সীমানা: যখন দুটি পাত একে অপরের দিকে এগিয়ে এসে সংঘর্ষ ঘটায়, তখন তাকে অভিসারী পাত সীমানা বলে। এই সংঘর্ষে ভারী পাতটি হালকা পাতের নীচে প্রবেশ করে (নিমজ্জন)। এর ফলে সমুদ্রখাত, ভঙ্গিল পর্বত (যেমন – হিমালয়, আন্দিজ), আগ্নেয়গিরি ও ভূমিকম্প বলয়ের সৃষ্টি হয়। এখানে ভূত্বক ধ্বংস হয়, তাই একে ‘বিনাশকারী পাত সীমানা’ বলে।
  3. নিরপেক্ষ পাত সীমানা: যখন দুটি পাত একে অপরকে ঘর্ষণ করে পাশাপাশি অগ্রসর হয়, তখন তাকে নিরপেক্ষ পাত সীমানা বলে। এখানে পাতের ধ্বংস বা সৃষ্টি কিছুই হয় না, কিন্তু তীব্র ভূমিকম্প হয়। যেমন – ক্যালিফোর্নিয়ার সান আন্দ্রিজ চ্যুতি।
তিন প্রকার পাত সীমানা ম্যাগমা শৈলশিরা প্রতিসারী সীমানা আগ্নেয়গিরি অভিসারী সীমানা নিরপেক্ষ সীমানা

চিত্র: তিন প্রকার পাত সীমানা।

৪. ভূমিকম্পের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো। [৫ নম্বর]

ভূমিকম্পের কারণ: ভূমিকম্পের প্রধান কারণগুলিকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:

  1. প্রাকৃতিক কারণ:
    • পাত সঞ্চালন: ভূমিকম্পের প্রধান কারণ হলো পাতের সঞ্চালন। বিশেষত অভিসারী ও নিরপেক্ষ পাত সীমানায় পাতগুলির সংঘর্ষে বা ঘর্ষণে প্রচণ্ড শক্তি মুক্ত হয়ে ভূমিকম্প হয়।
    • অগ্ন্যুৎপাত: অগ্ন্যুৎপাতের সময় প্রচণ্ড বিস্ফোরণের ফলে বা ম্যাগমা স্থানান্তরের ফলে সংলগ্ন অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়।
    • ধস ও হিমানী সম্প্রপাত: পার্বত্য অঞ্চলে বড় ধস নামলে বা হিমানী সম্প্রপাত ঘটলে স্থানীয়ভাবে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
  2. মনুষ্যসৃষ্ট কারণ:
    • জলাধার নির্মাণ: নদীতে বাঁধ দিয়ে বড় জলাধার নির্মাণ করলে তার জলের প্রচণ্ড চাপে ভূত্বকের দুর্বল অংশে ভূমিকম্প হতে পারে (যেমন – মহারাষ্ট্রের কয়না)।
    • পারমাণবিক বিস্ফোরণ: ভূগর্ভে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পরীক্ষা চালালে সেই কম্পন ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে।

ভূমিকম্পের ফলাফল:

  • ভূমিকম্পের ফলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, সেতু, বাঁধ ভেঙে পড়ে ও প্রচুর জীবনহানি ঘটে।
  • সমুদ্রের তলায় ভূমিকম্প হলে ‘সুনামি’ নামক বিশাল সামুদ্রিক ঢেউ উপকূল অঞ্চলে আছড়ে পড়ে ও ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায় (যেমন – ২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরের সুনামি)।
  • পার্বত্য অঞ্চলে ধস নামে এবং নদীতে বাঁধ তৈরি হয়ে বন্যা হতে পারে।
  • ভূত্বকে অনেক ফাটল বা চ্যুতির সৃষ্টি হয় এবং কখনও কখনও নতুন ভূভাগ বা দ্বীপ জেগে ওঠে।

অধ্যায় ৩: শিলা

৫. শিলাচক্র (Rock Cycle) কাকে বলে? চিত্রসহ বর্ণনা করো। [৫ নম্বর]

শিলাচক্র: প্রকৃতিতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় (যেমন – শীতলীকরণ, ক্ষয়ীভবন, জমাটবদ্ধতা, রূপান্তর) একটি শিলা থেকে অন্য শিলায় রূপান্তরের যে চক্রাকার আবর্তন ঘটে, তাকে শিলাচক্র বলে।

প্রক্রিয়া:

  1. ভূ-অভ্যন্তরের উত্তপ্ত গলিত ম্যাগমা ভূপৃষ্ঠে বা ভূ-অভ্যন্তরে শীতল ও কঠিন হয়ে আগ্নেয় শিলার সৃষ্টি করে।
  2. এই আগ্নেয় শিলা নদী, বায়ু, হিমবাহ ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত ও পরিবাহিত হয়ে সমুদ্র বা হ্রদের তলদেশে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। পরে উপরের স্তরের চাপে ও তাপে জমাট বেঁধে পাললিক শিলার সৃষ্টি করে।
  3. আগ্নেয় শিলা ও পাললিক শিলা—উভয়েই ভূ-অভ্যন্তরের প্রচণ্ড চাপ ও তাপের প্রভাবে পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হয়।
  4. এই তিন প্রকার শিলা (আগ্নেয়, পাললিক, রূপান্তরিত) ভূ-আন্দোলনের ফলে পুনরায় ভূগর্ভে প্রবেশ করলে প্রচণ্ড তাপে গলে গিয়ে আবার ম্যাগমায় পরিণত হয়।

এইভাবে প্রকৃতিতে শিলার উৎপত্তি ও এক শিলা থেকে অন্য শিলায় রূপান্তর চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে চলেছে।

শিলাচক্র ম্যাগমা আগ্নেয় শিলা পাললিক শিলা রূপান্তরিত শিলা শীতলীকরণ ক্ষয়ীভবন ও সঞ্চয় চাপ ও তাপ চাপ ও তাপ ভূগর্ভস্থ গলন

চিত্র: শিলাচক্র।

৬. আগ্নেয়, পাললিক ও রূপান্তরিত শিলার মধ্যে পার্থক্য লেখো। [৫ নম্বর]

বিষয় আগ্নেয় শিলা পাললিক শিলা রূপান্তরিত শিলা
উৎপত্তি ম্যাগমা বা লাভা শীতল ও কঠিন হয়ে সৃষ্টি হয়। ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থ স্তরে স্তরে সঞ্চিত ও জমাট বেঁধে সৃষ্টি হয়। আগ্নেয় বা পাললিক শিলা প্রচণ্ড চাপ ও তাপে রূপান্তরিত হয়ে সৃষ্টি হয়।
গঠন কেলাসিত ও স্ফটিকাকার হয়। স্তরীভূত (স্তর দেখা যায়) ও অকেলাসিত হয়। কেলাসিত হতে পারে এবং অনেক সময় বলয় (Foliation) দেখা যায়।
জীবাশ্ম জীবাশ্ম দেখা যায় না। জীবাশ্ম (Fossil) দেখা যায়। জীবাশ্ম দেখা যায় না (চাপ ও তাপে নষ্ট হয়ে যায়)।
কঠিনতা খুবই কঠিন ও ভারী হয়। তুলনামূলকভাবে নরম ও ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়। সবচেয়ে বেশি কঠিন ও কম ভঙ্গুর হয়।
উদাহরণ গ্রানাইট, ব্যাসল্ট। বেলেপাথর, চুনাপাথর, কাদা পাথর। মার্বেল, স্লেট, নিস, কোয়ার্টজাইট।

অধ্যায় ৪: চাপবলয় ও বায়ুপ্রবাহ

৭. পৃথিবীর প্রধান বায়ুচাপ বলয়গুলির উৎপত্তি চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো। [৫ নম্বর]

পৃথিবীর আবর্তন গতি এবং তাপের তারতম্যের কারণে পৃথিবীকে বেষ্টন করে ৭টি নির্দিষ্ট বায়ুচাপ বলয় সৃষ্টি হয়েছে। এগুলি হলো:

তাপজনিত বলয় (Thermal Belts):

  1. নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় (০°-৫° উঃ/দঃ): সারাবছর লম্ব সূর্যরশ্মির ফলে এখানকার বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে এখানে নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে। একে ‘নিরক্ষীয় শান্তবলয়’ বা ‘ডোলড্রামস’ বলে।
  2. সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় (৮০°-৯০° উঃ/দঃ): সারাবছর তির্যক সূর্যরশ্মির ফলে প্রচণ্ড শীতেল কারণে বায়ু ভারী ও উচ্চচাপযুক্ত হয়।

গতিজনিত বলয় (Dynamic Belts):

  1. কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় (২৫°-৩৫° উঃ/দঃ): নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উপরে ওঠা শীতল ও ভারী বায়ু এবং মেরু অঞ্চল থেকে আসা শীতল বায়ু পৃথিবীর আবর্তনের কারণে এই দুই অঞ্চলে নেমে আসে। ফলে বায়ুর পরিমাণ বেড়ে উচ্চচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়। একে ‘অশ্ব অক্ষাংশ’ বলে।
  2. সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় (৬০°-৭০° উঃ/দঃ): এই অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তন বেগ বেশি হওয়ায় বায়ু দুই দিকে ছিটকে যায়। ফলে বায়ুর পরিমাণ কমে নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়।
পৃথিবীর চাপবলয় নিরক্ষীয় নিম্নচাপ কর্কটীয় উচ্চচাপ মকরীয় উচ্চচাপ সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ সুমেরু উচ্চচাপ কুমেরু উচ্চচাপ

চিত্র: পৃথিবীর প্রধান ৭টি বায়ুচাপ বলয়।

৮. তিন প্রকার নিয়ত বায়ুর (আয়ন, পশ্চিমা, মেরু) উৎপত্তি ও গতিপথ চিত্রসহ বর্ণনা করো। [৫ নম্বর]

সারাবছর ধরে নিয়মিতভাবে উচ্চচাপ বলয় থেকে নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত বায়ুকে নিয়ত বায়ু বলে। এটি তিন প্রকার:

  1. আয়ন বায়ু (Trade Wind): কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্র অনুসারে, উত্তর গোলার্ধে এটি উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে এটি দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু নামে পরিচিত।
  2. পশ্চিমা বায়ু (Westerlies): কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যথাক্রমে সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্র অনুসারে, উত্তর গোলার্ধে এটি দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে এটি উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু নামে পরিচিত। দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগ বেশি হওয়ায় এটি ‘গর্জনশীল চল্লিশা’, ‘ক্রোধোন্মত্ত পঞ্চাশ’ নামে পরিচিত।
  3. মেরু বায়ু (Polar Wind): সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে যথাক্রমে সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্র অনুসারে, উত্তর গোলার্ধে এটি উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে এটি দক্ষিণ-পূর্ব মেরু বায়ু নামে পরিচিত।
পৃথিবীর নিয়ত বায়ুপ্রবাহ আয়ন বায়ু পশ্চিমা বায়ু মেরু বায়ু

চিত্র: পৃথিবীর প্রধান নিয়ত বায়ুপ্রবাহ।

অধ্যায় ৫: মেঘ-বৃষ্টি

৯. শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত (Orographic Rainfall) কীভাবে ঘটে? চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো। [৫ নম্বর]

‘শৈল’ কথার অর্থ পর্বত আর ‘উৎক্ষেপ’ হলো ওপরে ওঠা। জলীয়বাষ্পপূর্ণ আর্দ্র বায়ু প্রবাহের পথে আড়াআড়িভাবে কোনো পর্বত বা উচ্চভূমি অবস্থান করলে ওই বায়ু পর্বত বা উচ্চভূমিতে বাধা পেয়ে পর্বতের ঢাল বেয়ে ওপরের দিকে উঠে যায়।

প্রক্রিয়া:

  1. প্রতিবাত ঢাল: জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতে বাধা পেয়ে যে ঢাল বেয়ে উপরে ওঠে, তাকে প্রতিবাত ঢাল (Windward Slope) বলে। এই বায়ু উপরে ওঠার সময় প্রসারিত, শীতল ও ঘনীভূত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করে এবং এই প্রতিবাত ঢালে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
  2. অনুবাত ঢাল: ওই বায়ু যখন পর্বত অতিক্রম করে বিপরীত ঢালে পৌঁছায়, তাকে অনুবাত ঢাল (Leeward Slope) বলে। এই বায়ুতে জলীয়বাষ্প কমে যায়। এছাড়া এই বায়ু নীচের দিকে নামার সময় উষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে পড়ে, ফলে জলীয়বাষ্প ধারণক্ষমতা বেড়ে যায়। তাই অনুবাত ঢালে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে। এই অঞ্চলকে ‘বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল’ (Rainshadow Region) বলে।

উদাহরণ: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে (প্রতিবাত ঢাল) বাধা পেয়ে প্রচুর বৃষ্টি ঘটায়, কিন্তু পূর্ব ঢালে (অনুবাত ঢাল) কম বৃষ্টিপাতের কারণে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল সৃষ্টি হয়েছে।

শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত প্রতিবাত ঢাল আর্দ্র বায়ু বৃষ্টিপাত অনুবাত ঢাল শুষ্ক বায়ু (বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল)

চিত্র: শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ও বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল।

১০. পরিচলন ও ঘূর্ণবৃষ্টির উৎপত্তি চিত্রসহ বর্ণনা করো। [৫ নম্বর]

পরিচলন বৃষ্টিপাত (Convectional Rainfall):

যেসব অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে এবং জলভাগ বেশি (যেমন – নিরক্ষীয় অঞ্চল), সেখানে জল বাষ্পীভূত হয়ে বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়। এই উষ্ণ-আর্দ্র বায়ু সোজা উপরে উঠে (পরিচলন স্রোত) শীতল ও ঘনীভূত হয়ে কিউমুলোনিম্বাস মেঘ সৃষ্টি করে। এই মেঘ থেকে বজ্রবিদ্যুৎসহ যে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়, তাকে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রতিদিন বিকেলে এই বৃষ্টি হয় (4 O’clock Rain)।

ঘূর্ণবৃষ্টি (Cyclonic Rainfall):

কোনো স্থানে নিম্নচাপ কেন্দ্র সৃষ্টি হলে চারপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে কুণ্ডলী আকারে ওই কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। এই কেন্দ্রমুখী বায়ুকে ঘূর্ণবাত বলে। এই বায়ু নিম্নচাপ কেন্দ্রে এসে উষ্ণ ও হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এই ঊর্ধ্বগামী বায়ু শীতল ও ঘনীভূত হয়ে বজ্রবিদ্যুৎসহ যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাকে ঘূর্ণবৃষ্টি বলে। (যেমন – শরৎকালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সাইক্লোন)।

পরিচলন বৃষ্টি উষ্ণ আর্দ্র বায়ু পরিচলন বৃষ্টি ঘূর্ণবৃষ্টি নিম্নচাপ কেন্দ্র (চোখ) ঘূর্ণবৃষ্টি

চিত্র: পরিচলন বৃষ্টি (বামে) ও ঘূর্ণবৃষ্টি (ডানে)।

অধ্যায় ৬: জলবায়ু অঞ্চল

১১. নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান, জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য ও স্বাভাবিক উদ্ভিদ সম্পর্কে লেখো। [৫ নম্বর]

অবস্থান: নিরক্ষরেখার উভয় পাশে ০° থেকে ৫°-১০° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে এই জলবায়ু দেখা যায়। যেমন – দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন অববাহিকা, আফ্রিকার কঙ্গো অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া।

জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য:

  • উষ্ণতা: সারাবছর লম্ব সূর্যরশ্মির কারণে অত্যধিক উষ্ণতা (গড় ২৭° সে.) থাকে। বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর (পার্থক্য) খুবই কম (২°-৩° সে.)।
  • বৃষ্টিপাত: সারাবছর প্রচুর পরিচলন বৃষ্টিপাত হয় (গড় ২০০-২৫০ সেমি)। প্রতিদিন বিকেলে বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টি হয় (4 O’clock Rain)।

স্বাভাবিক উদ্ভিদ:

সারা বছর উষ্ণতা ও আর্দ্রতার কারণে এখানে পৃথিবীর বৃহত্তম, দুর্ভেদ্য চিরসবুজ অরণ্য সৃষ্টি হয়েছে, যা আমাজন অববাহিকায় ‘সেলভা’ নামে পরিচিত। গাছগুলির পাতা বড় ও চওড়া হয় এবং সূর্যের আলো পাওয়ার প্রতিযোগিতায় খুব লম্বা হয়। প্রধান গাছগুলি হলো মেহগনি, আবলুস, রবার, রোজউড, ব্রাজিল নাট ইত্যাদি।

১২. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান, বৈশিষ্ট্য ও কৃষিকাজ সম্পর্কে আলোচনা করো। [৫ নম্বর]

অবস্থান: উভয় গোলার্ধে ৩০০-৪০০ অক্ষাংশের মধ্যে মহাদেশের পশ্চিম দিকে এই জলবায়ু দেখা যায়। যেমন – ইউরোপের ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স; উত্তর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া; দক্ষিণ আমেরিকার চিলি; দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন এবং অস্ট্রেলিয়ার পার্থ।

জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য:

  • শুষ্ক গ্রীষ্মকাল: গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চল আয়ন বায়ুর প্রভাবে থাকায় বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। আবহাওয়া রোদ ঝলমলে থাকে।
  • আর্দ্র শীতকাল: শীতকালে এই অঞ্চল পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে আসে, ফলে সমুদ্র থেকে আসা আর্দ্র বায়ুর প্রভাবে মাঝারি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়।

কৃষিকাজ:

শীতের বৃষ্টিতে গম, যব চাষ হয়। তবে এই অঞ্চল মূলত ‘ফলের ঝুড়ি’ নামে খ্যাত। এখানকার রোদ ঝলমলে গ্রীষ্মকালে প্রচুর রসালো ফলের (যেমন – আঙুর, কমলালেবু, জলপাই, পিচ, আখরোট) চাষ হয়। আঙুর থেকে মদ এবং জলপাই থেকে তেল উৎপাদনে এই অঞ্চল পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ।

১৩. তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চলের অধিবাসীদের (এস্কিমো) জীবনযাত্রা পরিবেশ দ্বারা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়? [৫ নম্বর]

উত্তর গোলার্ধের সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলে (গ্রিনল্যান্ড, উত্তর কানাডা, সাইবেরিয়া) তুন্দ্রা জলবায়ু দেখা যায়। এখানকার অধিবাসী এস্কিমো বা ইনুইটদের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণভাবে চরম শীতল পরিবেশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত:

  1. বাসস্থান: শীতকালে বরফের চাঁই দিয়ে তৈরি গম্বুজ আকৃতির ঘর ‘ইগলু’ (Igloo)-তে বাস করে। গ্রীষ্মকালে বরফ গলে গেলে সিল মাছের চামড়া দিয়ে তৈরি তাঁবু ‘টিউপিক’ (Tupik)-এ বাস করে।
  2. খাদ্য: এখানে কৃষি কাজ অসম্ভব। তাই এরা পুরোটাই শিকারের উপর নির্ভরশীল। সীল, সিন্ধুঘোটক, বলগা হরিণ (ক্যারিবু), মেরু ভল্লুক শিকার করে তার কাঁচা মাংস খায়।
  3. পোশাক: শীতের হাত থেকে বাঁচতে এরা বলগা হরিণ বা সিলের চামড়া ও লোম দিয়ে তৈরি পোশাক (পার্কা) পরে।
  4. যাতায়াত: বরফের উপর দিয়ে যাতায়াতের জন্য কুকুরটানা চাকাহীন ‘স্লেজ’ (Sledge) গাড়ি এবং জলে শিকার করার জন্য সিলের চামড়া দিয়ে তৈরি ‘কায়াক’ (Kayak) নামক নৌকা ব্যবহার করে।

বর্তমানে এদের জীবনযাত্রায় আধুনিকতার ছোঁয়া লাগলেও মূল ভিত্তি এখনও প্রকৃতি-নির্ভর।

অধ্যায় ৭: মানুষের কার্যাবলি ও পরিবেশের অবনমন

১৪. পরিবেশের অবনমন (Environmental Degradation) কাকে বলে? এর প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণগুলি কী কী? [৫ নম্বর]

পরিবেশের অবনমন: বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে পরিবেশের ভৌত ও জৈব উপাদানগুলির গুণমান হ্রাস পাওয়াকে এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য নষ্ট হওয়াকে পরিবেশের অবনমন বলে। এর ফলে পরিবেশের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত হয়।

কারণসমূহ:

  1. প্রাকৃতিক কারণ:
    • ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত: এর ফলে ভূত্বকের পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ও বায়ুদূষণ ঘটে।
    • বন্যা ও খরা: এই দুই চরম পরিস্থিতি মাটির উর্বরতা নষ্ট করে, স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের ক্ষতি করে।
    • ঘূর্ণিঝড় ও সুনামি: উপকূল অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালায় এবং মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি করে।
  2. মনুষ্যসৃষ্ট কারণ (প্রধান কারণ):
    • অরণ্যচ্ছেদন: কৃষিজমি, বসতি ও শিল্পের প্রয়োজনে নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ভূমিক্ষয়, বন্যা বৃদ্ধি পায় ও জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায়।
    • শিল্পায়ন ও নগরায়ন: কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া (CO2, SO2) বায়ুদূষণ ও বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটায়। শিল্পবর্জ্য জল ও মাটি দূষিত করে।
    • অবৈজ্ঞানিক কৃষি: অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটি ও জল দূষিত হয় এবং মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা নষ্ট হয়।
    • জনসংখ্যা বৃদ্ধি: অতিরিক্ত জনসংখ্যা প্রাকৃতিক সম্পদের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে পরিবেশের অবনমন ঘটে।

১৫. স্থিতিশীল উন্নয়ন (Sustainable Development) কী? পরিবেশ সুরক্ষার জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত? [৫ নম্বর]

স্থিতিশীল উন্নয়ন: যে উন্নয়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার অক্ষুণ্ণ রাখা হয়, অর্থাৎ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না করে যে উন্নয়ন ঘটানো হয়, তাকে স্থিতিশীল বা সুস্থায়ী উন্নয়ন বলে।

পরিবেশ সুরক্ষার উপায়:

  1. অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার: কয়লা, খনিজ তেলের মতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ-বান্ধব সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জলবিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
  2. সম্পদের পুনর্ব্যবহার (Recycle): ব্যবহৃত দ্রব্যগুলিকে ফেলে না দিয়ে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে (যেমন – কাগজ, প্লাস্টিক, ধাতু)।
  3. বৃক্ষরোপণ ও অরণ্য সংরক্ষণ: অরণ্যচ্ছেদন বন্ধ করতে হবে এবং পরিকল্পনা মাফিক প্রচুর গাছ লাগাতে হবে।
  4. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে শিক্ষা ও প্রচারের মাধ্যমে সচেতন করতে হবে।
  5. কঠোর আইন প্রণয়ন: শিল্প ও যানবাহন থেকে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারকে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে।

অধ্যায় ৮: ভারতের প্রতিবেশী দেশসমূহ

১৬. SAARC কী? ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলির (নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা) অর্থনৈতিক সম্পর্ক আলোচনা করো। [৫ নম্বর]

SAARC: এর পুরো নাম South Asian Association for Regional Co-operation। এটি দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশ (ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান) নিয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক সংস্থা। এর উদ্দেশ্য হলো সদস্য দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

ভারতের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক:

  • নেপাল: নেপাল একটি স্থলবেষ্টিত দেশ। বাণিজ্যের জন্য এটি কলকাতা বন্দরের উপর নির্ভরশীল। ভারত নেপালে পেট্রোপণ্য, যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার রপ্তানি করে এবং নেপাল থেকে কাঁচাপাট, চামড়া, তৈলবীজ আমদানি করে।
  • বাংলাদেশ: বাংলাদেশও বাণিজ্যের জন্য ভারতের উপর নির্ভরশীল। ভারত বাংলাদেশে মোটরগাড়ি, যন্ত্রপাতি, কয়লা রপ্তানি করে এবং বাংলাদেশ থেকে পাট, ইলিশ মাছ, সুপারি, চামড়া আমদানি করে।
  • শ্রীলঙ্কা: শ্রীলঙ্কা একটি দ্বীপরাষ্ট্র। ভারত শ্রীলঙ্কায় চিনি, ইস্পাত, পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে এবং শ্রীলঙ্কা থেকে লবঙ্গ, দারুচিনি, গ্রাফাইট, মূল্যবান রত্ন ও নারকেলজাত দ্রব্য আমদানি করে।

১৭. নেপালের পর্যটন শিল্প এবং ভুটানের ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প সম্পর্কে লেখো। [৫ নম্বর]

নেপালের পর্যটন শিল্প:

পর্যটন শিল্প নেপালের অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি এবং বিদেশি মুদ্রা অর্জনের বৃহত্তম উৎস। এর কারণ:

  • পর্বতারোহণ: পৃথিবীর দশটি উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গের মধ্যে আটটি (মাউন্ট এভারেস্ট, অন্নপূর্ণা, কাঞ্চনজঙ্ঘা) নেপালে অবস্থিত, যা সারা পৃথিবীর পর্বতারোহীদের আকর্ষণ করে।
  • দর্শনীয় স্থান: রাজধানী কাঠমাণ্ডুর পশুপতিনাথ মন্দির, পোখরা উপত্যকার হ্রদ, লুম্বিনী (গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান) ইত্যাদি পর্যটকদের কাছে খুব আকর্ষণীয়।
  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: মনোরম পার্বত্য জলবায়ু ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

ভুটানের ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প:

ভুটানকে ‘বজ্রপাতের দেশ’ বলা হয়। এখানকার পার্বত্য জলবায়ু ফল চাষের পক্ষে খুব উপযোগী। এখানে প্রচুর পরিমাণে আপেল, কমলালেবু, আনারস ও বড় এলাচ উৎপাদিত হয়। এই ফলগুলির উপর ভিত্তি করে ভুটানে জ্যাম, জেলি, স্কোয়াশ, আচার ইত্যাদি তৈরির ফল প্রক্রিয়াকরণ শিল্প খুব উন্নত হয়েছে এবং এগুলি বিদেশে রপ্তানি করা হয়।

অধ্যায় ৯: উত্তর আমেরিকা

১৮. উত্তর আমেরিকার হ্রদ অঞ্চল (Great Lakes) শিল্পে এত উন্নত কেন? [৫ নম্বর]

উত্তর আমেরিকার পঞ্চহ্রদ (সুপিরিয়র, মিশিগান, হুরন, ইরি, অন্টারিও) সংলগ্ন অঞ্চল পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পাঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এর কারণগুলি হলো:

  1. খনিজ সম্পদ: এই অঞ্চলের কাছেই সুপিরিয়র হ্রদের তীরে মেসাবি রেঞ্জের উৎকৃষ্ট আকরিক লোহা এবং পূর্বে অ্যাপালেশিয়ান পার্বত্য অঞ্চলের উন্নতমানের কয়লা পাওয়া যায়।
  2. জলবিদ্যুৎ: ইরি ও অন্টারিও হ্রদের মাঝে অবস্থিত নায়গ্রা জলপ্রপাত থেকে প্রচুর সুলভ জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়, যা শিল্পের প্রধান চালিকাশক্তি।
  3. পরিবহন ব্যবস্থা: পঞ্চহ্রদ ও সেন্ট লরেন্স নদী দিয়ে সুলভ জলপথে ভারী কাঁচামাল (লোহা, কয়লা) ও শিল্পজাত দ্রব্য খুব সহজে পরিবহন করা যায়।
  4. কৃষিজ কাঁচামাল: নিকটবর্তী প্রেইরি অঞ্চল (গম) ও ভুট্টা বলয় (ভুট্টা, পশুজাত দ্রব্য) থেকে শিল্পের কাঁচামাল পাওয়া যায়। (যেমন – বাফেলোর ময়দা শিল্প, শিকাগোর মাংস শিল্প)।
  5. চাহিদা ও শ্রমিক: এই অঞ্চল অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় শ্রমিক এবং উৎপাদিত দ্রব্যের বিশাল বাজার রয়েছে।

১৯. প্রেইরি অঞ্চলকে ‘পৃথিবীর রুটির ঝুড়ি’ বলা হয় কেন? এই অঞ্চলের কৃষিকাজ ও পশুপালন সম্পর্কে লেখো। [৫ নম্বর]

‘পৃথিবীর রুটির ঝুড়ি’: উত্তর আমেরিকার মধ্যভাগের প্রেইরি সমভূমি একটি উর্বর নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি। এখানকার উর্বর চার্নোজেম মৃত্তিকায় এবং অনুকূল জলবায়ুতে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে (যেমন – হারভেস্টার, ট্রাক্টর) বিশাল খামারে প্রচুর পরিমাণে গম চাষ করা হয়। এই অঞ্চল পৃথিবীর প্রধান গম উৎপাদক অঞ্চলগুলির মধ্যে অন্যতম এবং এখান থেকে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গম রপ্তানি হয়, তাই প্রেইরি অঞ্চলকে ‘পৃথিবীর রুটির ঝুড়ি’ বলা হয়।

কৃষিকাজ: গম ছাড়াও এই অঞ্চলে পশুখাদ্য হিসাবে ভুট্টা, হে, ক্লোভার ও আলফা-আলফা ঘাস চাষ করা হয়।

পশুপালন: এই তৃণভূমি পশুপালনেও খুব উন্নত। এখানকার ভুট্টা ও উন্নত মানের ঘাস খেয়ে প্রচুর গবাদি পশু ও শূকর প্রতিপালন করা হয়। পশুজাত দ্রব্য (দুধ, মাংস) সংরক্ষণের জন্য এখানে উন্নত হিমাগার গড়ে উঠেছে। শিকাগো শহর (পৃথিবীর কসাইখানা) এই অঞ্চলের মাংস শিল্পের প্রধান কেন্দ্র।

অধ্যায় ১০: দক্ষিণ আমেরিকা

২০. পম্পাস অঞ্চলকে ‘দক্ষিণ আমেরিকার শস্যভাণ্ডার’ বলা হয় কেন? এই অঞ্চলের পশুপালন সম্পর্কে লেখো। [৫ নম্বর]

‘দক্ষিণ আমেরিকার শস্যভাণ্ডার’: আর্জেন্টিনার পম্পাস অঞ্চল একটি উর্বর নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি। এখানকার উর্বর চার্নোজেম মৃত্তিকায় এবং অনুকূল জলবায়ুতে প্রচুর পরিমাণে গম, ভুট্টা ও আখ উৎপাদিত হয়। বিশেষত, গম উৎপাদনে এই অঞ্চল এতটাই উন্নত যে আর্জেন্টিনা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ গম রপ্তানিকারক দেশ। তাই পম্পাস অঞ্চলকে ‘দক্ষিণ আমেরিকার শস্যভাণ্ডার’ বলা হয়।

পশুপালন: পম্পাস অঞ্চল কৃষিকাজের পাশাপাশি পশুপালনেও অত্যন্ত উন্নত।

  • এস্টানশিয়া: পশুপালনের জন্য যে বিশাল তৃণভূমি বা বাণিজ্যিক খামার দেখা যায়, তাকে ‘এস্টানশিয়া’ বলে।
  • গাউচো: এই এস্টানশিয়াগুলিতে যারা পশুপালনের কাজ করে, সেই পশুপালকদের ‘গাউচো’ বলা হয়।
  • পশুখাদ্য: এখানকার প্রধান ফসল ভুট্টা এবং তৃণভূমি অঞ্চলের আলফা-আলফা ঘাস উৎকৃষ্ট পশুখাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
  • মাংস শিল্প: পশুপালনের উপর ভিত্তি করে বুয়েনস আইরেস, লা প্লাটা ইত্যাদি শহরে মাংস প্রক্রিয়াকরণ শিল্প (Meat-packing industry) গড়ে উঠেছে, যা পৃথিবীর বিখ্যাত।

২১. সেলভা অরণ্যের অবস্থান, বৈশিষ্ট্য ও জীববৈচিত্র্য আলোচনা করো। [৫ নম্বর]

অবস্থান: দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী অববাহিকায় নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে (সারা বছর প্রচুর উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত) সেলভা অরণ্য অবস্থিত।

বৈশিষ্ট্য:

  • এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্য (Tropical Rainforest)।
  • সারা বছর সবুজ পাতায় ঢাকা থাকে বলে এটি চিরসবুজ অরণ্য।
  • গাছগুলি সূর্যের আলো পাওয়ার প্রতিযোগিতায় খুব লম্বা হয় এবং উপরের দিকে পাতাগুলি একে অপরের সাথে মিশে দুর্ভেদ্য ‘চাঁদোয়া’ (Canopy) সৃষ্টি করে।
  • অরণ্যের তলদেশ সূর্যের আলো পৌঁছাতে না পারায় স্যাঁতসেঁতে, অন্ধকারাচ্ছন্ন ও লতা-গুল্মে পূর্ণ থাকে।

জীববৈচিত্র্য:

  • উদ্ভিদ: এখানে অসংখ্য প্রজাতির গাছ দেখা যায়। প্রধান গাছগুলি হলো মেহগনি, আবলুস, রবার, রোজউড, ব্রাজিল নাট, পাম ইত্যাদি।
  • প্রাণী: এই অরণ্য জীববৈচিত্র্যে পূর্ণ। এখানে বাঁদর, ম্যাকাও, টুকান পাখি, বিষাক্ত সাপ (অ্যানাকোন্ডা), পিরানহা মাছ, জাগুয়ার এবং অসংখ্য কীটপতঙ্গ দেখা যায়।

২২. আটাকামা ও প্যাটাগোনিয়া মরুভূমি সৃষ্টির কারণ কী? [৫ নম্বর]

আটাকামা মরুভূমি (Atacama Desert):

দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিমে, আন্দিজ পর্বতমালার পশ্চিমে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে আটাকামা মরুভূমি অবস্থিত। এটি পৃথিবীর অন্যতম শুষ্ক মরুভূমি।

সৃষ্টির কারণ:

  1. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল: এটি আন্দিজ পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত। পূর্ব দিক থেকে আসা আর্দ্র বায়ু আন্দিজ পর্বতে বাধা পেয়ে পূর্ব ঢালে বৃষ্টি ঘটায়, কিন্তু পশ্চিম ঢালে পৌঁছায় না।
  2. শীতল স্রোত: উপকূল দিয়ে প্রবাহিত শীতল পেরু (বা হামবোল্ট) স্রোতের প্রভাবে উপকূলের বায়ু শীতল ও শুষ্ক থাকে। এই শীতল বায়ুতে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হতে পারে না, ফলে বৃষ্টিপাত হয় না।

প্যাটাগোনিয়া মরুভূমি (Patagonian Desert):

আর্জেন্টিনার দক্ষিণে অবস্থিত প্যাটাগোনিয়া একটি নাতিশীতোষ্ণ মরুভূমি।

সৃষ্টির কারণ:

  1. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল: এটি আন্দিজ পর্বতমালার পূর্ব দিকে, অর্থাৎ পশ্চিমা বায়ুর বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত। পশ্চিমা বায়ু আন্দিজের পশ্চিম ঢালে বৃষ্টি ঘটানোর পর যখন পূর্ব ঢালে পৌঁছায়, তখন তা শুষ্ক হয়ে যায়।

২৩. ব্রাজিল কফি উৎপাদনে পৃথিবীতে প্রথম কেন? ‘ফ্যাজেন্দা’ কী? [৫ নম্বর]

ব্রাজিল কফি উৎপাদনে পৃথিবীতে প্রথম স্থান অধিকার করে। এর কারণ:

  • টেরা রোসা মাটি: ব্রাজিলের উচ্চভূমিতে কফি চাষের উপযোগী বিখ্যাত ‘টেরা রোসা’ (Terra Rossa) নামক উর্বর লাভা গঠিত লাল মাটি দেখা যায়।
  • জলবায়ু: উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ু ও পরিমিত বৃষ্টিপাত (১৫০-২০০ সেমি) কফি চাষের পক্ষে আদর্শ।
  • ‘ফ্যাজেন্দা’ (Fazenda): ব্রাজিলের বিশাল কফি বাগিচাগুলিকে ‘ফ্যাজেন্দা’ বলা হয়। এই বিশাল বাগিচাগুলিতে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়।
  • সুলভ শ্রমিক: ফ্যাজেন্দাগুলিতে কাজ করার জন্য প্রচুর সুলভ শ্রমিক পাওয়া যায়।
  • বন্দর: উৎপাদিত কফি রপ্তানি করার জন্য সাও পাওলো ও সান্তোস বন্দরের সুবিধা রয়েছে।

অধ্যায় ১১: ওশিয়ানিয়া

২৪. অস্ট্রেলিয়া পশুপালনে (বিশেষত মেরিনো ভেড়া) এত উন্নত কেন? [৫ নম্বর]

অস্ট্রেলিয়া পশুপালনে, বিশেষত মেরিনো ভেড়া পালনে পৃথিবীতে প্রথম এবং পৃথিবীর বৃহত্তম পশম উৎপাদক দেশ। এর কারণ:

  1. বিস্তীর্ণ তৃণভূমি: পশুপালনের জন্য মারি-ডার্লিং অববাহিকায় ডাউনস (Downs) নামক বিশাল নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি রয়েছে, যা ভেড়া পালনের আদর্শ ক্ষেত্র।
  2. জলবায়ু: ভেড়া পালনের উপযোগী শুষ্ক ও নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু বিদ্যমান।
  3. জলসেচ: মধ্যভাগের সমভূমিতে ‘আর্টেজীয় কূপ’-এর মাধ্যমে যে জল পাওয়া যায়, তা পশুপালনের জলের চাহিদা মেটায়।
  4. মেরিনো ভেড়া: এখানকার মেরিনো নামক বিশেষ প্রজাতির ভেড়া থেকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানের ও সবথেকে বেশি পরিমাণে পশম (merino wool) পাওয়া যায়।
  5. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি: বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বড় বড় খামারে (Station) ভেড়া প্রতিপালন, পশম কাটা ও গবেষণার কাজ করা হয়।

২৫. নিউজিল্যান্ড ডেয়ারি শিল্পে এত উন্নত কেন? [৫ নম্বর]

নিউজিল্যান্ড দুগ্ধজাত দ্রব্য (মাখন, পনির, গুঁড়ো দুধ) উৎপাদন ও রপ্তানিতে পৃথিবীতে বিখ্যাত। এর কারণ:

  1. জলবায়ু: এখানকার শীতল ও আর্দ্র সামুদ্রিক জলবায়ু (পশ্চিম ইউরোপীয় জলবায়ুর মতো) সারা বছর সবুজ ঘাস জন্মানোর পক্ষে আদর্শ।
  2. তৃণভূমি: দক্ষিণ দ্বীপের ক্যান্টারবেরি সমভূমিতে এবং উত্তর দ্বীপে উন্নত মানের হে, ক্লোভার ও আলফা-আলফা ঘাস জন্মায়, যা গবাদি পশুর (বিশেষত জার্সি গোরু) উৎকৃষ্ট খাদ্য।
  3. উন্নত প্রযুক্তি: আধুনিক যান্ত্রিক খামারে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পশু পালন, দুধ সংগ্রহ এবং হিমাগারের মাধ্যমে দুগ্ধজাত দ্রব্য সংরক্ষণ করা হয়।
  4. রপ্তানি: উৎপাদিত দ্রব্যের বেশিরভাগই বিদেশে (বিশেষত যুক্তরাজ্যে) রপ্তানি করা হয়।

২৬. গ্রেট বেরিয়ার রিফ (মহান প্রবাল প্রাচীর) এবং আর্টেজীয় কূপ সম্পর্কে সচিত্র টিকা লেখো। [৫ নম্বর]

গ্রেট বেরিয়ার রিফ (Great Barrier Reef):

অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূলের অদূরে প্রশান্ত মহাসাগরে প্রবাল বা কোরাল নামক একপ্রকার ক্ষুদ্র সামুদ্রিক কীটের দেহবশেষ (খোলস) লক্ষ লক্ষ বছর ধরে সঞ্চিত হয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রবাল প্রাচীর (Reef) সৃষ্টি হয়েছে। একেই গ্রেট বেরিয়ার রিফ বলে। এটি প্রায় ২,৩০০ কিমি দীর্ঘ এবং এর জীববৈচিত্র্য অসাধারণ। এটি মহাকাশ থেকেও দৃশ্যমান।

আর্টেজীয় কূপ (Artesian Well):

অস্ট্রেলিয়ার মধ্যভাগের সমভূমি অঞ্চলে (বিশেষত কুইন্সল্যান্ডে) মাটির নীচে দুটি অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের মধ্যে একটি প্রবেশ্য শিলাস্তর (জলপূর্ণ) বাটি বা দোমড়ানো থালার মতো অবস্থায় রয়েছে। এই প্রবেশ্য স্তরে কূপ খনন করলে ভূগর্ভের জলের স্বাভাবিক চাপে জল নিজে থেকেই ফোয়ারার মতো ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে। এই ধরনের কূপকে ‘আর্টেজীয় কূপ’ বলে। এই কূপের জল পশুপালনের জলের চাহিদা মেটায়।

আর্টেজীয় কূপ অপ্রবেশ্য শিলা প্রবেশ্য (জলপূর্ণ) স্তর অপ্রবেশ্য শিলা আর্টেজীয় কূপ

চিত্র: আর্টেজীয় কূপের গঠন।

২৭. অস্ট্রেলিয়ার ভূপ্রাকৃতিক বিভাগগুলির চিত্রসহ বিবরণ দাও। [৫ নম্বর]

অস্ট্রেলিয়ার ভূপ্রকৃতিকে প্রধান তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:

  1. পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চল: এটি একটি প্রাচীন গন্ডোয়ানা পাতের অংশ এবং মহাদেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে অবস্থিত। এটি মূলত শুষ্ক, বালুকাময় মরুভূমি (যেমন – গ্রেট স্যান্ডি, গিবসন, গ্রেট ভিক্টোরিয়া মরুভূমি)। এই অঞ্চলের মাঝে মাঝে নিচু শিলাগঠিত মালভূমি (যেমন – কিম্বার্লি) ও লবণাক্ত হ্রদ (যেমন – আয়ার হ্রদ) দেখা যায়।
  2. পূর্বের উচ্চভূমি অঞ্চল: পূর্বে কেপ ইয়র্ক উপদ্বীপ থেকে তাসমানিয়া পর্যন্ত উপকূল বরাবর উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত প্রাচীন ভঙ্গিল পর্বতমালা ‘গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জ’ অবস্থিত। এটি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে উচ্চভূমিতে পরিণত হয়েছে। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হলো মাউন্ট কোসিয়াস্কো (২,২২৮ মি)।
  3. মধ্যভাগের সমভূমি অঞ্চল: পশ্চিমে মালভূমি ও পূর্বে উচ্চভূমির মাঝে এই সুবিশাল সমভূমি অবস্থিত। এর তিনটি অংশ:
    • কার্পেন্টারিয়া সমভূমি: উত্তরের কার্পেন্টারিয়া উপসাগরের তীরে অবস্থিত।
    • আয়ার হ্রদ অববাহিকা: এটি মধ্যভাগের নিম্নতম অংশ এবং এখানে আর্টেজীয় কূপ দেখা যায়।
    • মারি-ডার্লিং অববাহিকা: দক্ষিণে মারি ও ডার্লিং নদী দ্বারা গঠিত উর্বর সমভূমি, যা ‘ডাউনস’ তৃণভূমি নামে পরিচিত।

২৮. অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের জলবায়ুর বৈচিত্র্যের কারণগুলি কী কী? [৫ নম্বর]

অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের জলবায়ুর বৈচিত্র্যের প্রধান কারণগুলি হলো:

  1. অক্ষাংশগত অবস্থান: মহাদেশের মাঝখান দিয়ে মকরক্রান্তি রেখা (Tropic of Capricorn) বিস্তৃত হওয়ায় উত্তর অংশ ক্রান্তীয় (উষ্ণ) এবং দক্ষিণ অংশ নাতিশীতোষ্ণ (মৃদু) জলবায়ুর অন্তর্গত।
  2. ভূপ্রকৃতি: পূর্বদিকে উত্তর-দক্ষিণে গ্রেট ডিভাইডিং রেঞ্জ অবস্থিত হওয়ায় প্রশান্ত মহাসাগরের আর্দ্র বায়ু মহাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না। ফলে পূর্ব উপকূলে বৃষ্টিপাত হলেও পশ্চিম ও মধ্যভাগ বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়ে মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে।
  3. সমুদ্রস্রোত: পূর্ব উপকূলে উষ্ণ পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোতের প্রভাবে জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র থাকে। কিন্তু পশ্চিম উপকূলে শীতল পশ্চিম অস্ট্রেলীয় স্রোতের প্রভাবে জলবায়ু শীতল ও শুষ্ক থাকে।
  4. বায়ুপ্রবাহ: উত্তর অস্ট্রেলিয়ায় গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হয়। দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বে শীতকালে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে (ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু) বৃষ্টি হয়।
  5. বিশালতা: মহাদেশের মধ্যভাগ সমুদ্র থেকে বহু দূরে হওয়ায় জলবায়ু চরমভাবাপন্ন (মহাদেশীয়) প্রকৃতির হয়।

২৯. নিউজিল্যান্ডের ভূপ্রকৃতি ও জলবায়ুর বর্ণনা দাও। [৫ নম্বর]

ভূপ্রকৃতি: নিউজিল্যান্ড মূলত দুটি প্রধান দ্বীপ (উত্তর দ্বীপ ও দক্ষিণ দ্বীপ) এবং একাধিক ক্ষুদ্র দ্বীপ নিয়ে গঠিত।

  • দক্ষিণ দ্বীপ: এই দ্বীপের প্রধান ভূপ্রকৃতি হলো দক্ষিণ আল্পস (Southern Alps) নামক নবীন ভঙ্গিল পর্বতমালা। এর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট কুক (৩,৭২৪ মি)। এই পার্বত্য অঞ্চলে অনেক হিমবাহ ও ফিয়র্ড (Fjord) দেখা যায়। পূর্বদিকে ক্যান্টারবেরি সমভূমি অবস্থিত।
  • উত্তর দ্বীপ: এটি মূলত আগ্নেয়গিরি ও উষ্ণ প্রস্রবণ (Geyser) অধ্যুষিত একটি উচ্চভূমি। এখানে মাউন্ট এগমন্ট, রুয়াপেহু ইত্যাদি আগ্নেয়গিরি রয়েছে।

জলবায়ু:

নিউজিল্যান্ড নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে অবস্থিত এবং চারদিকে সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় এখানকার জলবায়ু শীতল ও আর্দ্র সামুদ্রিক (পশ্চিম ইউরোপীয়) প্রকৃতির। এখানে পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে সারাবছরই বৃষ্টিপাত হয়, তবে পশ্চিম ঢালে বৃষ্টির পরিমাণ বেশি। পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর তুষারপাত হয়।

BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu
BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu