প্রকল্প পত্র: প্রাকৃতিক ঘটনা ও তার বিশ্লেষণ
Processing…

বিষয়: প্রাকৃতিক ঘটনা ও তার বিশ্লেষণ

অধ্যায় ৫ (নোটস)

আবহাওয়া, জলবায়ু ও বিশ্ব উষ্ণায়ন

১. আবহাওয়া (Weather) ও জলবায়ু (Climate) -এর মধ্যে পার্থক্য কী? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

  • আবহাওয়া: কোনো একটি নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের (যেমন একটি দিন) বায়ুর উষ্ণতা, চাপ, আর্দ্রতা, মেঘাচ্ছন্নতা, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির সামগ্রিক অবস্থাকে আবহাওয়া বলে। এটি খুব পরিবর্তনশীল।
  • জলবায়ু: কোনো একটি অঞ্চলের সাধারণত ৩০-৩৫ বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকে জলবায়ু বলে। এটি তুলনামূলকভাবে স্থায়ী।

২. বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming) কাকে বলে? [২ নম্বর]

মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস, বিশেষ করে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) -এর পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এই গ্যাসগুলি পৃথিবীর বিকিরিত তাপ শোষণ করে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়িয়ে তুলছে। এই ঘটনাকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বলে।

৩. দুটি প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাসের নাম লেখো। [১ নম্বর]

কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) এবং মিথেন (CH4)।

৪. বিশ্ব উষ্ণায়নের দুটি প্রধান কারণ কী? [২ নম্বর]

  • জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, খনিজ তেল) -এর অতিরিক্ত দহন, যার ফলে প্রচুর CO2 উৎপন্ন হয়।
  • অরণ্যচ্ছেদন বা গাছপালা কেটে ফেলার ফলে বায়ুমণ্ডলে CO2 -এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৫. বিশ্ব উষ্ণায়নের দুটি ক্ষতিকর প্রভাব লেখো। [২ নম্বর]

  • মেরু অঞ্চলের ও হিমবাহের বরফ গলে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে উপকূলবর্তী এলাকা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
  • জলবায়ুর চরম পরিবর্তন ঘটছে (যেমন – অতিবৃষ্টি, খরা, শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়)।

অ্যাসিড বৃষ্টি (Acid Rain)

৬. অ্যাসিড বৃষ্টি কী? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

কলকারখানা, যানবাহন ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) ও নাইট্রোজেনের অক্সাইড (NO2) গ্যাস বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ও অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে যথাক্রমে সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) ও নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) তৈরি করে। এই অ্যাসিডগুলি বৃষ্টির জলের সাথে মিশে পৃথিবীতে নেমে এলে তাকে অ্যাসিড বৃষ্টি বলে।

অ্যাসিড বৃষ্টি SO₂, NO₂ H₂SO₄, HNO₃ অ্যাসিড বৃষ্টি

চিত্র: অ্যাসিড বৃষ্টি গঠন প্রক্রিয়া।

৭. অ্যাসিড বৃষ্টির দুটি ক্ষতিকর প্রভাব লেখো। [২ নম্বর]

  • মৃত্তিকা দূষণ: মাটির অম্লত্ব বাড়িয়ে দেয়, ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয় ও উপকারী অণুজীব মারা যায়।
  • ঐতিহাসিক সৌধের ক্ষতি: মার্বেল পাথর বা চুনাপাথর দিয়ে তৈরি সৌধ (যেমন তাজমহল) অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়ায় ক্ষয়প্রাপ্ত হয় (স্টোন ক্যান্সার)।
  • জলজ দূষণ: পুকুর বা হ্রদের জল আম্লিক হয়ে যাওয়ায় মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর মৃত্যু হয়।

৮. ‘স্মগ’ (Smog) বা ধোঁয়াশা কী? [২ নম্বর]

শীতকালে শিল্পাঞ্চল বা শহরে ভাসমান ধূলিকণা, ধোঁয়া ও কুয়াশা একসঙ্গে মিশে যে বিষাক্ত ধূসর আবরণ তৈরি করে, তাকে ধোঁয়াশা বা স্মগ (Smoke + Fog) বলে। এটি শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের রোগের কারণ হয়।

ওজোন স্তর (Ozone Layer)

৯. ওজোন স্তর কী? এটি কোথায় অবস্থিত? [২ নম্বর]

বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে (ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৫-৩০ কিমি উঁচুতে) ওজোন গ্যাস (O3) -এর একটি ঘন আবরণ দেখা যায়, যা সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মিকে (UV ray) শোষণ করে। এই আবরণকে ওজোন স্তর বলে।

১০. ওজোন গহ্বর (Ozone Hole) কী? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

মানুষের তৈরি ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) নামক যৌগ (যা রেফ্রিজারেটর, AC থেকে নির্গত হয়) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছে ওজোন (O3) গ্যাসকে ভেঙে অক্সিজেন (O2) অণু ও পরমাণুতে পরিণত করে। এর ফলে ওজোন স্তরের ঘনত্ব কমে গিয়ে যে পাতলা অংশের সৃষ্টি হয়, তাকে ওজোন গহ্বর বলে।

১১. ওজোন স্তর ধ্বংসের প্রধান কারণ কী? [১ নম্বর]

ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) গ্যাস।

১২. ওজোন স্তর ধ্বংসের একটি ক্ষতিকর প্রভাব লেখো। [২ নম্বর]

ওজোন স্তর ধ্বংসের ফলে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি সরাসরি পৃথিবীতে চলে আসে, যার ফলে মানুষের ত্বকের ক্যানসার, চোখের ছানি এবং উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে।

বজ্রপাত (Lightning)

১৩. বজ্রপাত কী? [৩ নম্বর]

বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পপূর্ণ মেঘের মধ্যে জলকণাগুলির ঘর্ষণের ফলে প্রচুর স্থির তড়িৎ আধান (চার্জ) সৃষ্টি হয়। সাধারণত মেঘের উপরের অংশে ধনাত্মক (+) আধান এবং নীচের অংশে ঋণাত্মক (-) আধান জমা হয়। এই আধানের পরিমাণ খুব বেড়ে গেলে তা মেঘ থেকে মেঘে বা মেঘ থেকে পৃথিবীতে তীব্র তড়িৎপ্রবাহ (electric discharge) রূপে নেমে আসে। এই ঘটনাকেই বজ্রপাত বলে।

বজ্রপাত + + + + + + + + +

চিত্র: বজ্রপাত (মেঘ থেকে ভূমিতে)।

১৪. বজ্রপাতের সময় শব্দ (বজ্রনাদ) শোনা যায় কেন? [২ নম্বর]

বজ্রপাতের ফলে বায়ুমণ্ডলের মধ্য দিয়ে যে তীব্র তড়িৎপ্রবাহ হয়, তাতে বায়ুর তাপমাত্রা হঠাৎ প্রচণ্ড বেড়ে যায় (প্রায় ৩০০০০°C)। এই 엄청 তাপের ফলে বায়ু হঠাৎ প্রসারিত হয় এবং বায়ুতে তীব্র কম্পনের সৃষ্টি হয়। এই কম্পনের ফলেই আমরা প্রচণ্ড শব্দ (বজ্রনাদ) শুনতে পাই।

১৫. বজ্রপাতের সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত? [৩ নম্বর]

  • খোলা মাঠ, উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটির নীচে আশ্রয় নেওয়া উচিত নয়।
  • পাকা বাড়ির নীচে আশ্রয় নেওয়া সবচেয়ে নিরাপদ।
  • ধাতব বস্তু, যেমন ছাতা, সাইকেল ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা উচিত।
  • জলাশয় বা নদী থেকে দূরে থাকা উচিত।

BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu
BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu