বিষয়: মৌল, যৌগ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া
অধ্যায় ২.১: পদার্থের প্রকৃতি (নোটস)
১. পদার্থের ধর্ম কাকে বলে? এগুলি কয় প্রকার ও কী কী?
প্রত্যেক পদার্থের নিজস্ব কিছু বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্ট্য আছে যার সাহায্যে একটি পদার্থকে অন্য পদার্থ থেকে আলাদা করে চেনা যায়। পদার্থের এইসব গুণ বা বৈশিষ্ট্যগুলোকেই পদার্থের ধর্ম বলে।
পদার্থের ধর্মগুলিকে প্রধানত দু-ভাগে ভাগ করা যায়:
- (i) ভৌত ধর্ম (Physical Properties): যেমন – বর্ণ, গন্ধ, গলনাঙ্ক, স্ফুটনাঙ্ক, দ্রাব্যতা, চৌম্বক ধর্ম ইত্যাদি।
- (ii) রাসায়নিক ধর্ম (Chemical Properties): যেমন – অন্য পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করার ক্ষমতা, দহন ক্ষমতা ইত্যাদি।
২. ভৌত ধর্ম ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে মূল পার্থক্য কী?
- ভৌত ধর্ম পদার্থের বাহ্যিক অবস্থা বা প্রকৃতির পরিচয় দেয়, কিন্তু অণুর গঠনের পরিচয় দেয় না (যেমন – জলের স্ফুটনাঙ্ক $100^{\circ}C$)।
- রাসায়নিক ধর্ম থেকে কোনো পদার্থের অন্য পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করার প্রবণতা ও ক্ষমতা বোঝা যায় (যেমন – জল তড়িৎ প্রবাহের ফলে হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনে বিশ্লিষ্ট হয়)।
৩. পদার্থের তিনটি ভৌত অবস্থার নাম লেখো।
পদার্থের তিনটি ভৌত অবস্থা হলো: (১) কঠিন, (২) তরল, এবং (৩) গ্যাসীয়।
৪. ঊর্ধ্বপাতন (Sublimation) কাকে বলে? দুটি ঊর্ধ্বপাতিত পদার্থের উদাহরণ দাও।
কিছু কিছু কঠিন পদার্থকে তাপ দিলে তা তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্পে (গ্যাসীয় অবস্থায়) পরিণত হয়। এই ঘটনাকে ঊর্ধ্বপাতন বলে।
উদাহরণ: কপূর, ন্যাপথালিন, আয়োডিন, অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (নিশাদল), কঠিন কার্বন ডাইঅক্সাইড ইত্যাদি।
চিত্র: ঊর্ধ্বপাতন পরীক্ষা। কঠিন কপূর তাপ গ্রহণ করে সরাসরি বাষ্পে পরিণত হচ্ছে।
৫. পদার্থের ধর্মকে কয় ভাগে ভাগ করা যায়?
দুই ভাগে: (১) ভৌত ধর্ম ও (২) রাসায়নিক ধর্ম।
৬. গন্ধের সাহায্যে শনাক্ত করা যায় এমন দুটি গ্যাসীয় পদার্থের নাম লেখো।
- অ্যামোনিয়া ($NH_3$): তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত।
- হাইড্রোজেন সালফাইড ($H_2S$): পচা ডিমের মতো গন্ধযুক্ত।
৭. দ্রাব্যতা (Solubility) ধর্ম ব্যবহার করে কীভাবে চিনি ও সালফারের গুঁড়োকে শনাক্ত করবে?
দুটি পদার্থকেই জলে দ্রবীভূত করার চেষ্টা করা হবে।
- চিনি: চিনি জলে দ্রাব্য, অর্থাৎ গুলে যাবে।
- সালফার: সালফার জলে অদ্রাব্য, অর্থাৎ গুলবে না।
এই পরীক্ষার মাধ্যমে পদার্থ দুটিকে শনাক্ত করা যাবে। (দ্রষ্টব্য: সালফার কার্বন ডাইসালফাইডে দ্রাব্য)।
৮. চৌম্বক ধর্ম (Magnetism) ব্যবহার করে কীভাবে লোহার গুঁড়ো ও অ্যালুমিনিয়ামের গুঁড়োকে আলাদা করবে?
মিশ্রণটির কাছে একটি চুম্বক আনলে লোহার গুঁড়ো চুম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে আলাদা হয়ে যাবে, কিন্তু অ্যালুমিনিয়ামের গুঁড়ো আকৃষ্ট হবে না। লোহা একটি চৌম্বক পদার্থ, অ্যালুমিনিয়াম নয়।
৯. গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্কের সাহায্যে কীভাবে বিশুদ্ধ পদার্থ শনাক্ত করা যায়?
প্রত্যেক বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের একটি নির্দিষ্ট গলনাঙ্ক থাকে এবং প্রত্যেক বিশুদ্ধ তরল পদার্থের একটি নির্দিষ্ট স্ফুটনাঙ্ক (নির্দিষ্ট চাপে) থাকে। এই মানগুলি তুলনা করে পদার্থকে শনাক্ত করা যায়। যেমন, যে কঠিনটি $0^{\circ}C$-এ গলে তা বরফ, এবং যে তরল $100^{\circ}C$-এ ফোটে তা জল।
১০. ধাতু (Metal) কাদের বলে?
সাধারণত যে সব মৌল উজ্জ্বল, কঠিন (ব্যতিক্রম পারদ), তাপ ও তড়িতের সুপরিবাহী, এবং যাদের পিটিয়ে পাত বা সরু তারে পরিণত করা যায়, তাদের ধাতু বলে। যেমন – লোহা, তামা, সোনা।
১১. অধাতু (Non-metal) কাদের বলে?
সাধারণত যে সব মৌল উজ্জ্বল নয় (ব্যতিক্রম আয়োডিন, গ্রাফাইট), তাপ ও তড়িতের কুপরিবাহী (ব্যতিক্রম গ্রাফাইট), এবং ভঙ্গুর (পিটলে গুঁড়ো হয়ে যায়), তাদের অধাতু বলে। যেমন – কার্বন, সালফার, অক্সিজেন।
১২. পারদ ধাতু হলেও তরল। ব্রোমিন অধাতু হলেও তরল। (তথ্য)
পারদ (Hg) হলো একমাত্র ধাতু যা সাধারণ উষ্ণতায় তরল থাকে। ব্রোমিন (Br) হলো একমাত্র অধাতু যা সাধারণ উষ্ণতায় তরল থাকে।
১৩. নমনীয়তা (Malleability) ধর্ম কাকে বলে? এই ধর্ম কোন শ্রেণির মৌলের?
যে ধর্মের জন্য কোনো পদার্থকে পিটিয়ে পাতলা পাতে পরিণত করা যায়, তাকে নমনীয়তা বলে। এটি ধাতুদের একটি প্রধান ধর্ম। সোনা ও রূপার নমনীয়তা সবচেয়ে বেশি।
১৪. প্রসারণশীলতা (Ductility) ধর্ম কাকে বলে?
যে ধর্মের জন্য কোনো পদার্থকে টেনে সরু তারে পরিণত করা যায়, তাকে প্রসারণশীলতা বলে। এটিও ধাতুদের ধর্ম। সোনা সবচেয়ে বেশি প্রসারণশীল।
১৫. এমন একটি অধাতুর নাম লেখো যা তাপ ও তড়িতের সুপরিবাহী।
গ্রাফাইট (কার্বনের একটি রূপভেদ)। এটি অধাতু হওয়া সত্ত্বেও তাপ ও তড়িতের সুপরিবাহী।
১৬. ধাতব অক্সাইড ও অধাতব অক্সাইডের প্রকৃতি সাধারণত কীরূপ হয়?
- ধাতব অক্সাইড: সাধারণত ক্ষারকীয় প্রকৃতির হয়। এরা জলে দ্রবীভূত হয়ে ক্ষার উৎপন্ন করে ও লাল লিটমাসকে নীল করে। যেমন, ম্যাগনেশিয়াম অক্সাইড (MgO)।
- অধাতব অক্সাইড: সাধারণত আম্লিক (অ্যাসিডিক) প্রকৃতির হয়। এরা জলে দ্রবীভূত হয়ে অ্যাসিড উৎপন্ন করে ও নীল লিটমাসকে লাল করে। যেমন, সালফার ডাইঅক্সাইড ($SO_2$)।
১৭. উভধর্মী অক্সাইড (Amphoteric Oxide) কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যেসব অক্সাইডের ক্ষারকীয় ও আম্লিক উভয় গুণই বর্তমান (অর্থাৎ অ্যাসিড ও ক্ষার উভয়ের সঙ্গেই বিক্রিয়া করে), তাদের উভধর্মী অক্সাইড বলে।
উদাহরণ: অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড ($Al_2O_3$) এবং জিঙ্ক অক্সাইড (ZnO)।
১৮. প্রশম অক্সাইড (Neutral Oxide) কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
যেসব অক্সাইডের আম্লিক বা ক্ষারকীয় কোনো ধর্মই নেই, তাদের প্রশম অক্সাইড বলে।
উদাহরণ: কার্বন মনোক্সাইড (CO), নাইট্রাস অক্সাইড ($N_2O$)।
১৯. জলের সঙ্গে বিভিন্ন ধাতুর বিক্রিয়ার তীব্রতা কেমন?
- সোডিয়াম (Na), পটাশিয়াম (K): ঠান্ডা জলের সঙ্গেই তীব্রভাবে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন গ্যাস ও তাপ উৎপন্ন করে, যাতে আগুন লেগে যেতে পারে।
- ক্যালসিয়াম (Ca): ঠান্ডা জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে, কিন্তু তীব্রতা অনেক কম।
- লোহা (Fe), জিঙ্ক (Zn): ঠান্ডা বা গরম জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না, কিন্তু ফুটন্ত স্টিমের (জলীয় বাষ্প) সঙ্গে বিক্রিয়া করে ধাতব অক্সাইড ও হাইড্রোজেন ($H_2$) গ্যাস উৎপন্ন করে।
- সোনা (Au), রূপা (Ag), তামা (Cu): কোনো অবস্থাতেই জলের সঙ্গে বিক্রিয়া করে না।
২০. ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণি (Activity Series) কী?
বিভিন্ন ধাতুকে তাদের রাসায়নিক সক্রিয়তার ক্রমানুসারে (বেশি থেকে কম) সাজালে যে শ্রেণি পাওয়া যায়, তাকে ধাতুর সক্রিয়তা শ্রেণি বলে।
ক্রম: K > Na > Ca > Mg > Al > Zn > Fe > Pb > (H) > Cu > Hg > Ag > Au
(সবচেয়ে বেশি সক্রিয় K, সবচেয়ে কম সক্রিয় Au)
২১. সক্রিয়তা শ্রেণির একটি ব্যবহার লেখো।
সক্রিয়তা শ্রেণিতে যে ধাতু হাইড্রোজেনের (H) ওপরে আছে (যেমন – Zn, Fe, Mg), তারা লঘু অ্যাসিড (যেমন, লঘু $H_2SO_4$ বা $HCl$) থেকে হাইড্রোজেন গ্যাস প্রতিস্থাপিত করতে পারে। যারা হাইড্রোজেনের নীচে আছে (যেমন – Cu, Ag, Au), তারা পারে না।