বিষয়: ভৌত পরিবেশ
অধ্যায় ১.২: স্পর্শ ছাড়া ক্রিয়াশীল বল (নোটস)
১. মহাকর্ষ বল কাকে বলে?
এই বিশ্বের যে-কোনো দুটি বস্তুকণাই তাদের সংযোজক সরলরেখা বরাবর একে অন্যকে আকর্ষণ করে। এই বলের নাম মহাকর্ষ বল।
২. অভিকর্ষ বল কী?
পৃথিবী ও পৃথিবীর আশেপাশে থাকা অন্য কোনো বস্তুর মধ্যে যে মহাকর্ষ বল ক্রিয়া করে, তারই নাম অভিকর্ষ বল। এটি মহাকর্ষ বলের একটি বিশেষ রূপ।
৩. নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রটি লেখো।
দুটি বস্তুকণার মধ্যে ক্রিয়াশীল মহাকর্ষ বলের মান (F) বস্তুকণাদুটির ভরের ($m_1$ ও $m_2$) গুণফলের সমানুপাতিক এবং তাদের মধ্যেকার দূরত্বের (d) বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।
গাণিতিক রূপ: $F = G \times \frac{m_1 \times m_2}{d^2}$
এখানে G হলো ‘সার্বজনীন মহাকর্ষ ধ্রুবক’।
চিত্র: মহাকর্ষ বল। দুটি ভর পরস্পরকে আকর্ষণ করে।
৪. G-কে ‘সার্বজনীন’ ধ্রুবক বলা হয় কেন?
G-এর মান এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সব জায়গায় একই থাকে এবং বস্তুদুটির মাঝখানে কী মাধ্যম আছে তার ওপর নির্ভর করে না, তাই একে ‘সার্বজনীন’ ধ্রুবক বলে।
৫. দুটি বস্তুকণার মধ্যে দূরত্ব বাড়ালে মহাকর্ষ বলের কী পরিবর্তন হয়?
দুটি বস্তুকণার মধ্যে দূরত্ব (d) বাড়ালে, তাদের মধ্যে ক্রিয়াশীল মহাকর্ষ বল (F) কমে যায়। সূত্র ($F \propto 1/d^2$) অনুযায়ী, দূরত্ব দ্বিগুণ করলে বল $\frac{1}{4}$ ভাগ (চার ভাগের এক ভাগ) হয়ে যাবে।
৬. ওজন (Weight) কাকে বলে?
কোনো বস্তুর ওপর পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের মানকে অর্থাৎ পৃথিবী কোনো বস্তুকে যে বল দিয়ে টানে, তাকে ওই বস্তুর ওজন (W) বলে। বস্তুর ভর (m) ও অভিকর্ষজ ত্বরণ (g) -এর গুণফল হলো ওজন।
অর্থাৎ, W = m × g
৭. অভিকর্ষজ ত্বরণ (g) কাকে বলে?
অভিকর্ষ বলের প্রভাবে অবাধে পতনশীল কোনো বস্তুতে যে ত্বরণের সৃষ্টি হয়, তাকে অভিকর্ষজ ত্বরণ (g) বলা হয়। পৃথিবীতে এর গড় মান প্রায় 9.8 m/s²।
৮. চাঁদে কোনো বস্তুর ওজন পৃথিবীর কত ভাগ হয়?
চাঁদের অভিকর্ষজ ত্বরণ পৃথিবীর $\frac{1}{6}$ গুণ। তাই চাঁদে কোনো বস্তুর ওজনও পৃথিবীর $\frac{1}{6}$ ভাগ হয়। (কিন্তু বস্তুর ভর একই থাকে)।
৯. গ্যালিলিওর পতনশীল বস্তুর পরীক্ষাটি কী প্রমাণ করে?
বিজ্ঞানী গ্যালিলিও প্রমাণ করেন যে, বায়ুর বাধা না থাকলে, একই উচ্চতা থেকে হালকা ও ভারী সব বস্তুকে একসঙ্গে ছেড়ে দিলে তারা সমান দ্রুততায় নীচে নামবে এবং একসঙ্গে মাটি স্পর্শ করবে। অর্থাৎ, বস্তুর পতনকাল তার ভরের ওপর নির্ভর করে না।
১০. একটি পালক ও একটি কয়েনকে বায়ুশূন্য স্থানে উপর থেকে ফেললে কোনটি আগে পড়বে?
বায়ুশূন্য স্থানে কোনো বাধা না থাকায় উভয় বস্তুর ওপর অভিকর্ষজ ত্বরণ (g) সমানভাবে কাজ করবে। তাই পালক ও কয়েন একই সঙ্গে মাটি স্পর্শ করবে।
১১. কৃত্রিম উপগ্রহ কীভাবে পৃথিবীকে ঘিরে ঘুরতে থাকে?
একটি বস্তুকে ভূমির সমান্তরালে 엄청 জোরে ছুড়তে থাকলে তা অভিকর্ষের টানে পৃথিবীর দিকে বাঁকতে থাকে। যদি ছোড়ার বেগ খুব বেশি হয় (প্রায় 8 km/s), তবে বস্তুটি পৃথিবীতে ফিরে না এসে, পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রভাবেই পৃথিবীকে ঘিরে একটি বৃত্তাকার পথে ঘুরতে থাকে। কৃত্রিম উপগ্রহকে এভাবেই ঘোরানো হয়।
১২. স্থির তড়িৎ বল (Electrostatic Force) কী?
ঘর্ষণের ফলে বস্তুতে এক ধরণের পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে বস্তুটি অন্য বস্তুকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করার ক্ষমতা অর্জন করে। এই আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বলকেই স্থির তড়িৎ বল বলে। এই বল স্পর্শ ছাড়াই ক্রিয়া করতে পারে।
১৩. ঘর্ষণের ফলে বস্তুতে কী সৃষ্টি হয়?
ঘর্ষণের ফলে বস্তুতে তড়িৎ আধান (Electric Charge) সৃষ্টি হয়।
১৪. তড়িৎ আধান কয় প্রকার ও কী কী? কে এই নামকরণ করেন?
তড়িৎ আধান দুই প্রকার: (১) ধনাত্মক (+) তড়িৎ বা পজিটিভ চার্জ এবং (২) ঋণাত্মক (-) তড়িৎ বা নেগেটিভ চার্জ। বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এই নামকরণ করেন।
১৫. সমজাতীয় ও ভিন্নজাতীয় আধান পরস্পরকে কী করে?
- সমজাতীয় তড়িৎ আধান (যেমন, + ও + বা, – ও -) পরস্পরকে বিকর্ষণ করে (দূরে ঠেলে দেয়)।
- ভিন্নজাতীয় তড়িৎ আধান (যেমন, + ও -) পরস্পরকে আকর্ষণ করে (কাছে টানে)।
১৬. কুলম্ব-এর সূত্রটি কী?
দুটি বিন্দু-আকৃতির তড়িতাহিত বস্তুর মধ্যে ক্রিয়াশীল তড়িৎ বল (F) -এর মান, আধানদুটির ($q_1$ ও $q_2$) গুণফলের সমানুপাতিক এবং তাদের মধ্যেকার দূরত্বের (r) বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।
গাণিতিক রূপ: $F = K \times \frac{q_1 \times q_2}{r^2}$ (এখানে K একটি ধ্রুবক যা মাধ্যমের ওপর নির্ভর করে)।
১৭. পরমাণু নিস্তড়িৎ হয় কেন?
পরমাণুতে তিন রকম কণা থাকে: প্রোটন (+), নিউট্রন (নিস্তড়িৎ) ও ইলেকট্রন (-)। একটি পরমাণুতে প্রোটনগুলোর মোট ধনাত্মক আধানের পরিমাণ এবং ইলেকট্রনগুলোর মোট ঋণাত্মক আধানের পরিমাণ সমান হয়। ফলে পরমাণুর মোট আধান শূন্য হয়, তাই পরমাণু নিস্তড়িৎ।
১৮. ঘর্ষণের ফলে বস্তু কীভাবে আহিত হয়?
দুটি বস্তুকে পরস্পর ঘষলে, একটি বস্তু থেকে ইলেকট্রন (ঋণাত্মক কণা) বেরিয়ে অন্য বস্তুতে চলে যায়।
- যে বস্তুটি ইলেকট্রন হারায়, তাতে প্রোটনের (+ আধান) তুলনায় ইলেকট্রন (- আধান) কম হয়ে যায়। ফলে বস্তুটি ধনাত্মক (+) আধানে আহিত হয়।
- যে বস্তুটি ওই ইলেকট্রন গ্রহণ করে, তাতে প্রোটনের তুলনায় ইলেকট্রন বেশি হয়ে যায়। ফলে বস্তুটি ঋণাত্মক (-) আধানে আহিত হয়।
চিত্র: ইলেকট্রন বর্জন করে $Na$ ধনাত্মক আয়নে এবং ইলেকট্রন গ্রহণ করে $Cl$ ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয়।
১৯. তড়িৎ আবেশ (Electrostatic Induction) কাকে বলে?
কোনো তড়িতাহিত বস্তুর উপস্থিতির কারণে একটি নিস্তড়িৎ বস্তুর দুই প্রান্তে বিপরীত তড়িৎ-এর সমাবেশ ঘটার এই ঘটনাকে বলে তড়িৎ আবেশ। এই কারণেই তড়িতাহিত চিরুনি নিস্তড়িৎ কাগজের টুকরোকে আকর্ষণ করে।