প্রকল্প পত্র: পরিবেশের সংকট ও সংরক্ষণ
Processing…

বিষয়: পরিবেশের সংকট ও সংরক্ষণ

অধ্যায় ১০ (নোটস)

পরিবেশ দূষণ (Environmental Pollution)

১. পরিবেশ দূষণ কাকে বলে? [২ নম্বর]

বায়ু, জল, মাটি ইত্যাদি পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের ভৌত, রাসায়নিক বা জৈবিক বৈশিষ্ট্যের যে অবাঞ্ছিত পরিবর্তন জীবের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে, তাকে পরিবেশ দূষণ বলে।

২. দূষক (Pollutant) কাকে বলে? [২ নম্বর]

যেসব অবাঞ্ছিত ক্ষতিকারক পদার্থ বা বস্তু পরিবেশে মিশে পরিবেশ দূষণ ঘটায়, তাদের দূষক বলে। যেমন: প্লাস্টিক, ডিডিটি (DDT), কার্বন মনোক্সাইড (CO)।

৩. বায়ু দূষণের প্রধান কারণগুলি কী কী? [৩ নম্বর]

  • গ্রিনহাউস গ্যাস: জীবাশ্ম জ্বালানি (কয়লা, পেট্রল) পোড়ানোর ফলে উৎপন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4), নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) ইত্যাদি।
  • অ্যাসিড বৃষ্টি: কলকারখানা ও গাড়ি থেকে নির্গত সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) ও নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx)।
  • SPM: বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম ধূলিকণা (Suspended Particulate Matter)।
  • CFC: রেফ্রিজারেটর ও এসি থেকে নির্গত ক্লোরোফ্লুরোকার্বন।

৪. গ্রিনহাউস প্রভাব (Greenhouse Effect) কী? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

বায়ুমণ্ডলে থাকা কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি গ্যাসগুলি পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপশক্তিকে শোষণ করে এবং তা পুনরায় পৃথিবীতে ফিরিয়ে দেয়। এর ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা বেড়ে চলেছে। এই ঘটনাকে গ্রিনহাউস প্রভাব বলে।

গ্রিনহাউস প্রভাব পৃথিবী গ্রিনহাউস গ্যাস স্তর (CO₂, CH₄) সূর্যালোক তাপ (আবদ্ধ)

চিত্র: গ্রিনহাউস প্রভাব।

৫. বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming) কাকে বলে? [২ নম্বর]

গ্রিনহাউস প্রভাবের ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের গড় তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনাকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বলে।

৬. বিশ্ব উষ্ণায়নের দুটি ক্ষতিকারক প্রভাব লেখো। [২ নম্বর]

  • মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, ফলে উপকূলবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
  • আবহাওয়ার ধরণ বদলে যাচ্ছে, ফলে খরা, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বাড়ছে।

৭. অ্যাসিড বৃষ্টি (Acid Rain) কী? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) ও নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx) বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ও অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে যথাক্রমে সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) ও নাইট্রিক অ্যাসিড (HNO3) তৈরি করে। এই অ্যাসিডগুলি বৃষ্টির জলের সঙ্গে মিশে পৃথিবীতে ঝরে পড়লে, তাকে অ্যাসিড বৃষ্টি বলে।

৮. অ্যাসিড বৃষ্টির দুটি ক্ষতিকারক প্রভাব লেখো। [২ নম্বর]

  • মাটির অম্লত্ব বাড়িয়ে মাটিকে অনুর্বর করে তোলে।
  • মার্বেল পাথরের তৈরি সৌধ (যেমন তাজমহল) ও মূর্তির ক্ষতি করে (স্টোন ক্যান্সার)।

৯. ওজোন স্তর (Ozone Layer) কী? এর গুরুত্ব কী? [৩ নম্বর]

বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার স্তরে ওজোন (O3) গ্যাসের যে ঘন আবরণটি রয়েছে, তাকে ওজোন স্তর বলে।

গুরুত্ব: এই স্তর সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি (UV) রশ্মিকে শোষণ করে জীবজগতকে রক্ষা করে।

১০. ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য দায়ী প্রধান গ্যাস কোনটি? [১ নম্বর]

ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC)। এটি রেফ্রিজারেটর, এসি ইত্যাদি থেকে নির্গত হয়।

১১. জল দূষণের প্রধান কারণগুলি কী কী? [৩ নম্বর]

  • কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বৃষ্টির জলে ধুয়ে জলাশয়ে মেশা।
  • কলকারখানার দূষিত রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ জলে মেশা।
  • শহরের নর্দমার বর্জ্য জল ও ডিটারজেন্ট জলে মেশা।

১২. ইউট্রোফিকেশন (Eutrophication) কাকে বলে? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

জলাশয়ে কৃষিক্ষেত্রের সার (ফসফেট, নাইট্রেট) মিশলে শৈবাল ও জলজ উদ্ভিদের (যেমন – কচুরিপানা) খুব দ্রুত বৃদ্ধি ঘটে। এই শৈবাল ও উদ্ভিদগুলি মরে গিয়ে পচে যায়, যা পচানোর জন্য ব্যাকটেরিয়া জলের বেশিরভাগ অক্সিজেন ব্যবহার করে ফেলে। ফলে জলে অক্সিজেনের অভাব (BOD বৃদ্ধি) দেখা দেয় এবং মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনাকে ইউট্রোফিকেশন বলে।

১৩. মাটি দূষণের দুটি কারণ লেখো। [২ নম্বর]

  • অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার।
  • প্লাস্টিক, পলিথিন ও অন্যান্য কঠিন বর্জ্য পদার্থ মাটিতে ফেলা।

জীববৈচিত্র্য ও সংরক্ষণ (Biodiversity and Conservation)

১৪. জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভার্সিটি (Biodiversity) কাকে বলে? [২ নম্বর]

কোনো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বা বাস্তুতন্ত্রে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রকার জীবের (উদ্ভিদ, প্রাণী, অণুজীব) মধ্যে যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তাকে সামগ্রিকভাবে জীববৈচিত্র্য বলে।

১৫. জীববৈচিত্র্য হ্রাসের প্রধান কারণগুলি কী কী? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

  • বাসস্থানের ধ্বংস: জঙ্গল কেটে ফেলা, জলাভূমি ভরাট করা ইত্যাদি।
  • দূষণ: বায়ু, জল ও মাটি দূষণের ফলে জীবদের মৃত্যু।
  • অতিরিক্ত শিকার: বাণিজ্যিক লোভে বা খাদ্যের জন্য অতিরিক্ত প্রাণী শিকার করা।
  • বিশ্ব উষ্ণায়ন: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনেক প্রজাতি মানিয়ে নিতে না পেরে বিলুপ্ত হচ্ছে।

১৬. বিপন্ন প্রজাতি (Endangered Species) কাকে বলে? [২ নম্বর]

যেসব জীব প্রজাতির সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ার ফলে অদূর ভবিষ্যতে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তাদের বিপন্ন প্রজাতি বলে। যেমন: রয়েল বেঙ্গল টাইগার, একশৃঙ্গ গণ্ডার।

১৭. ভারতের দুটি বিপন্ন প্রাণীর নাম লেখো। [১ নম্বর]

রয়েল বেঙ্গল টাইগার ও একশৃঙ্গ গণ্ডার।

১৮. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ (Conservation) কাকে বলে? [২ নম্বর]

বৈজ্ঞানিক উপায়ে জীববৈচিত্র্যের সঠিক ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ এবং তার অপচয় রোধ করার মাধ্যমে জীবজগতকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করার পদ্ধতিকে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ বলে।

১৯. ইন-সিটু (In-situ) ও এক্স-সিটু (Ex-situ) সংরক্ষণের মধ্যে পার্থক্য কী? [৪ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

বৈশিষ্ট্য ইন-সিটু (In-situ) সংরক্ষণ এক্স-সিটু (Ex-situ) সংরক্ষণ
সংজ্ঞা জীবদের যখন তাদের নিজস্ব প্রাকৃতিক বাসস্থানেই সংরক্ষণ করা হয়। জীবদের যখন তাদের নিজস্ব বাসস্থানের বাইরে কৃত্রিম পরিবেশে এনে সংরক্ষণ করা হয়।
উদাহরণ জাতীয় উদ্যান (National Park), অভয়ারণ্য (Sanctuary), বায়োস্ফিয়ার রিজার্ভ। চিড়িয়াখানা (Zoo), বোটানিক্যাল গার্ডেন, ক্রায়োসংরক্ষণ (বীজ বা জননকোশ সংরক্ষণ)।
ইন-সিটু বনাম এক্স-সিটু সংরক্ষণ ইন-সিটু (নিজস্ব বাসস্থান) (অভয়ারণ্য) এক্স-সিটু (কৃত্রিম বাসস্থান) (চিড়িয়াখানা)

চিত্র: ইন-সিটু (যেমন জঙ্গল) ও এক্স-সিটু (যেমন চিড়িয়াখানা) সংরক্ষণ।

২০. জাতীয় উদ্যান (National Park) ও অভয়ারণ্য (Sanctuary) -এর মধ্যে একটি পার্থক্য লেখো। [২ নম্বর]

জাতীয় উদ্যান: এটি কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এখানে বাস্তুতন্ত্রের সামগ্রিক সংরক্ষণের পাশাপাশি পর্যটন অনুমোদিত হলেও মানুষের প্রবেশ ও বসবাস কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

অভয়ারণ্য: এটি রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এখানে মূলত কোনো একটি বিশেষ বিপন্ন প্রজাতিকে সংরক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হয় এবং নির্দিষ্ট নিয়মের অধীনে পর্যটন ও গবেষণার কাজ চলতে পারে।

২১. পশ্চিমবঙ্গের দুটি জাতীয় উদ্যানের নাম লেখো। [২ নম্বর]

জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান (গণ্ডারের জন্য বিখ্যাত) এবং সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান (বাঘের জন্য বিখ্যাত)।

২২. রেড ডেটা বুক (Red Data Book) কী? [২ নম্বর]

IUCN (International Union for Conservation of Nature) দ্বারা প্রকাশিত যে পুস্তিকায় বিপন্ন, বিলুপ্তপ্রায় এবং বিরল জীব প্রজাতিদের তালিকা প্রকাশ করা হয়, তাকে রেড ডেটা বুক বলে।

BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu
BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu