প্রকল্প পত্র: অণুজীবের জগৎ
Processing…

বিষয়: অণুজীবের জগৎ

অধ্যায় ৭ (নোটস)

অণুজীবের পরিচিতি

১. অণুজীব (Microorganism) কাকে বলে? [২ নম্বর]

যেসব জীবদের খালি চোখে দেখা যায় না, দেখতে গেলে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের (microscope) প্রয়োজন হয়, তাদের অণুজীব বা অনুবীক্ষণিক জীব বলে।

২. প্রধান কয়েক প্রকার অণুজীবের নাম লেখো। [২ নম্বর]

প্রধান অণুজীবগুলি হলো: ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক (যেমন – ইস্ট) এবং আদ্যপ্রাণী বা প্রোটোজোয়া (যেমন – অ্যামিবা)।

বিভিন্ন প্রকার অণুজীব ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস আদ্যপ্রাণী (অ্যামিবা) ছত্রাক (ইস্ট) শৈবাল

চিত্র: বিভিন্ন প্রকার অণুজীবের সরলীকৃত রূপ।

৩. ভাইরাসকে ‘অকোশীয়’ (Acellular) বলা হয় কেন? [২ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

ভাইরাসের দেহে কোনো কোশীয় গঠন (কোশপর্দা, সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস ইত্যাদি) থাকে না। এটি শুধুমাত্র নিউক্লিক অ্যাসিড (DNA বা RNA) ও প্রোটিন আবরণ নিয়ে গঠিত। এই কারণে ভাইরাসকে অকোশীয় বলা হয়।

৪. ভাইরাসকে ‘জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের বস্তু’ বলা হয় কেন? [৩ নম্বর]

জীবদেহের বাইরে ভাইরাস জড়ের মতো নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে, কিন্তু যখনই কোনো জীবন্ত কোশের সংস্পর্শে আসে, তখন সেই কোশের ভেতরের উপাদান ব্যবহার করে সংখ্যাবৃদ্ধি করে এবং জীবের মতো আচরণ করে। এই দ্বৈত আচরণের জন্যই ভাইরাসকে জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের বস্তু বলা হয়।

অণুজীবের উপকারিতা ও অপকারিতা

৫. প্যাথোজেন (Pathogen) বা রোগজীবাণু কাকে বলে? [২ নম্বর]

যেসব অণুজীব (যেমন কিছু ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাক বা আদ্যপ্রাণী) জীবদেহে প্রবেশ করে রোগ সৃষ্টি করে, তাদের প্যাথোজেন বা রোগজীবাণু বলে।

৬. সংক্রামক রোগ (Infectious Disease) কাকে বলে? [২ নম্বর]

যেসব রোগ একজন আক্রান্ত ব্যক্তির দেহ থেকে অন্য সুস্থ ব্যক্তির দেহে বায়ু, জল, খাদ্য বা বাহকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তাদের সংক্রামক রোগ বলে। যেমন: ইনফ্লুয়েঞ্জা, কলেরা।

৭. কয়েকটি অণুজীবঘটিত রোগ ও তাদের জীবাণুর নাম লেখো। [৫ নম্বর]

রোগের নাম জীবাণুর প্রকৃতি জীবাণুর নাম (উদাহরণ) কীভাবে ছড়ায়
কলেরা ব্যাকটেরিয়া ভিব্রিও কলেরি দূষিত জল ও খাদ্যের মাধ্যমে
টাইফয়েড ব্যাকটেরিয়া সালমোনেলা টাইফি দূষিত জল ও খাদ্যের মাধ্যমে
ম্যালেরিয়া আদ্যপ্রাণী (প্রোটোজোয়া) প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে
ডেঙ্গি ভাইরাস ফ্ল্যাভিভাইরাস এডিস ইজিপ্টি মশার মাধ্যমে
ইনফ্লুয়েঞ্জা (ফ্লু) ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস বায়ুর মাধ্যমে (হাঁচি, কাশি)

৮. দই তৈরিতে কোন ব্যাকটেরিয়া সাহায্য করে? [১ নম্বর]

ল্যাকটোব্যাসিলাস (Lactobacillus) নামক ব্যাকটেরিয়া দুধের ল্যাকটোজ শর্করাকে ল্যাকটিক অ্যাসিডে পরিণত করে দুধকে দইয়ে রূপান্তরিত করে।

৯. পাউরুটি তৈরিতে কোন ছত্রাক ব্যবহার করা হয়? [১ নম্বর]

ইস্ট (Yeast) নামক এককোষী ছত্রাক।

১০. কোহল সন্ধান (Fermentation) কাকে বলে?
ইস্ট কীভাবে এই প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে? [৩ নম্বর]

যে প্রক্রিয়ায় অণুজীব (বিশেষত ইস্ট) অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে শর্করা জাতীয় খাদ্যকে ভেঙে অ্যালকোহল (ইথানল) ও কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরি করে, তাকে কোহল সন্ধান বলে।

পাউরুটি তৈরির সময় ময়দার মধ্যে থাকা শর্করাকে ইস্ট কোহল সন্ধানের মাধ্যমে ভেঙে CO2 গ্যাস উৎপন্ন করে, যা পাউরুটিকে ফাঁপা ও নরম করে তোলে।

১১. অ্যান্টিবায়োটিক (Antibiotic) কাকে বলে? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

যেসব রাসায়নিক পদার্থ এক প্রকার অণুজীব (প্রধানত ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক) থেকে উৎপন্ন হয়ে অন্য প্রকার অণুজীবকে (বিশেষত ব্যাকটেরিয়া) ধ্বংস করে বা তাদের বংশবৃদ্ধি রোধ করে, তাদের অ্যান্টিবায়োটিক বা জীবাণুনাশক বলে। যেমন: পেনিসিলিন।

১২. প্রথম আবিষ্কৃত অ্যান্টিবায়োটিক কোনটি? কে আবিষ্কার করেন? [২ নম্বর]

প্রথম আবিষ্কৃত অ্যান্টিবায়োটিক হলো পেনিসিলিন। বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ফ্লেমিং এটি আবিষ্কার করেন।

১৩. পেনিসিলিন কোন ছত্রাক থেকে পাওয়া যায়? [১ নম্বর]

পেনিসিলিয়াম নোটেটাম (Penicillium notatum) নামক ছত্রাক থেকে।

নাইট্রোজেন চক্র ও খাদ্য সংরক্ষণ

১৪. নাইট্রোজেন সংবন্ধন (Nitrogen Fixation) কী? [৩ নম্বর]

বায়ুমণ্ডলের মুক্ত নাইট্রোজেন (N2) গ্যাস, যা জীবেরা সরাসরি গ্রহণ করতে পারে না, তাকে প্রকৃতিতে বা অণুজীবের সাহায্যে নাইট্রোজেনঘটিত যৌগ (যেমন – অ্যামোনিয়া, নাইট্রেট) রূপে মাটিতে আবদ্ধ করার প্রক্রিয়াকে নাইট্রোজেন সংবন্ধন বলে।

১৫. একটি নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী ব্যাকটেরিয়ার নাম লেখো। [১ নম্বর]

রাইজোবিয়াম (Rhizobium)।

১৬. রাইজোবিয়াম (Rhizobium) ব্যাকটেরিয়া কোথায় বাস করে? [২ নম্বর]

রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া শিম্ব গোত্রীয় উদ্ভিদের (যেমন – মটর, ছোলা, শিম) মূলের অর্বুদে (nodule) মিথোজীবী রূপে বাস করে এবং বায়ুর নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে।

নাইট্রোজেন চক্র বায়ুমণ্ডলীয় N₂ বজ্রপাত উদ্ভিদ প্রাণী মাটির যৌগ (NH₃, NO₃⁻) N₂ সংবন্ধন (রাইজোবিয়াম) ডিনাইট্রিফিকেশন পচন

চিত্র: নাইট্রোজেন চক্রের সরল রূপ।

১৭. খাদ্য সংরক্ষণ (Food Preservation) কাকে বলে? [২ নম্বর]

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যে অণুজীবের বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার রোধ করে খাদ্যবস্তুকে পচনের হাত থেকে রক্ষা করা হয় এবং তার গুণমান ও পুষ্টিমূল্য বজায় রাখা হয়, তাকে খাদ্য সংরক্ষণ বলে।

১৮. খাদ্য সংরক্ষণের কয়েকটি ঘরোয়া পদ্ধতির নাম লেখো। [৩ নম্বর]

  • শুকনো করা (Drying): রোদে শুকিয়ে খাদ্য থেকে জল বের করে দেওয়া (যেমন – শুঁটকি মাছ, আমসত্ত্ব)।
  • লবণাক্তকরণ (Salting): নুন মাখিয়ে রাখা (যেমন – ইলিশ মাছ, আম)।
  • মিষ্টি দ্রবণে রাখা (Sugaring): চিনির ঘন রসে রাখা (যেমন – জ্যাম, জেলি, মোরব্বা)।
  • হিমায়িতকরণ (Freezing): ফ্রিজে বা খুব ঠান্ডা জায়গায় রাখা।

১৯. পাস্তুরাইজেশন (Pasteurization) কী? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

এটি একটি তরল খাদ্য (বিশেষত দুধ) সংরক্ষণের পদ্ধতি। এই প্রক্রিয়ায়, দুধকে প্রথমে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় (প্রায় ৬২.৮°C -তে ৩০ মিনিট বা ৭২°C -তে ১৫ সেকেন্ড) গরম করা হয় এবং তারপর হঠাৎ করে খুব ঠান্ডা (১০°C -এর নীচে) করে প্যাকেটজাত করা হয়। এর ফলে দুধের মধ্যে থাকা ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলি মারা যায় বা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে, কিন্তু দুধের পুষ্টিগুণ বজায় থাকে।

২০. পাস্তুরাইজেশনের একটি ব্যবহার লেখো। [১ নম্বর]

প্যাকেটজাত দুধ সংরক্ষণে পাস্তুরাইজেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu
BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu