বিষয়: কয়েকটি গ্যাসের পরিচিতি
অধ্যায় ৩ (নোটস)
অক্সিজেন (O2)
১. পরীক্ষাগারে অক্সিজেন (O2) গ্যাস প্রস্তুতির নীতিটি লেখো।
পটাশিয়াম ক্লোরেট (KClO3) এবং ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড (MnO2) -এর মিশ্রণকে ৪:১ অনুপাতে মিশিয়ে একটি শক্ত কাচের টেস্টটিউবে নিয়ে উত্তপ্ত করলে পটাশিয়াম ক্লোরেট বিয়োজিত হয়ে অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
বিক্রিয়া: 2KClO3 $\xrightarrow[\text{তাপ}]{MnO2}$ 2KCl + 3O2 ↑
এখানে MnO2 (ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড) অনুঘটক হিসেবে কাজ করে এবং বিক্রিয়ার গতি বাড়ায়।
চিত্র: পরীক্ষাগারে অক্সিজেন প্রস্তুতি ও সংগ্রহ।
২. হাইড্রোজেন পারক্সাইড (H2O2) থেকে কীভাবে O2 প্রস্তুত করা হয়?
সাধারণ উষ্ণতায় ম্যাঙ্গানিজ ডাইঅক্সাইড (MnO2) অনুঘটকের উপস্থিতিতে হাইড্রোজেন পারক্সাইড (H2O2) বিয়োজিত হয়ে জল ও অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন করে।
বিক্রিয়া: 2H2O2 $\xrightarrow{MnO2}$ 2H2O + O2 ↑
৩. অক্সিজেন গ্যাস কীভাবে সংগ্রহ করা হয়?
অক্সিজেন গ্যাস জলের থেকে সামান্য ভারী কিন্তু জলে প্রায় অদ্রাব্য, তাই জলের নিম্ন অপসারণ দ্বারা গ্যাস জারে সংগ্রহ করা হয়।
৪. অক্সিজেনের ভৌত ধর্ম লেখো।
- এটি বর্ণহীন, গন্ধহীন ও স্বাদহীন গ্যাস।
- জলে সামান্য দ্রাব্য।
- বাতাসের চেয়ে সামান্য ভারী।
৫. অক্সিজেনের রাসায়নিক ধর্ম (ব্যবহার) লেখো।
- দহন: অক্সিজেন নিজে জ্বলে না, কিন্তু অন্যকে জ্বলতে সাহায্য করে। একটি নিবন্ত পাটকাঠি অক্সিজেনের জারে প্রবেশ করালে তা উজ্জ্বল শিখায় জ্বলে ওঠে।
- জারণ: এটি একটি জারক পদার্থ। এটি ধাতু ও অধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে অক্সাইড গঠন করে। যেমন: C + O2 → CO2; 2Mg + O2 → 2MgO
- ব্যবহার: জীবজগতে শ্বসনকার্য, হাসপাতালে রোগীর শ্বাসকষ্টে, পর্বতারোহী ও ডুবুরিদের শ্বাসকার্যে এবং অক্সি-অ্যাসিটিলিন শিখা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
হাইড্রোজেন (H2)
৬. পরীক্ষাগারে হাইড্রোজেন (H2) গ্যাস প্রস্তুতির নীতিটি লেখো।
সাধারণ উষ্ণতায় সাধারণ জিঙ্ক (Zn) ছিবড়ার সঙ্গে লঘু সালফিউরিক অ্যাসিড (H2SO4) বা লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) -এর বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।
বিক্রিয়া: Zn + H2SO4 → ZnSO4 + H2 ↑
এই বিক্রিয়াটি একটি উলফ বোতলে (Woulff’s bottle) করা হয়।
৭. হাইড্রোজেন গ্যাস কীভাবে সংগ্রহ করা হয়?
হাইড্রোজেন গ্যাস জলের থেকে খুব হালকা এবং জলে প্রায় অদ্রাব্য, তাই জলের নিম্ন অপসারণ দ্বারা গ্যাস জারে সংগ্রহ করা হয়।
৮. হাইড্রোজেনের ভৌত ধর্ম লেখো।
- এটি বর্ণহীন, গন্ধহীন ও স্বাদহীন গ্যাস।
- এটি সমস্ত পদার্থের চেয়ে হালকা।
- জলে প্রায় অদ্রাব্য।
৯. হাইড্রোজেনের রাসায়নিক ধর্ম (ব্যবহার) লেখো।
- দাহ্যতা: হাইড্রোজেন গ্যাস নিজে জ্বলে। একটি জ্বলন্ত পাটকাঠি হাইড্রোজেনপূর্ণ জারে ধরলে গ্যাসটি ‘পপ্’ (pop) শব্দ করে নীল শিখায় জ্বলে ওঠে।
- বিজারণ ধর্ম: উত্তপ্ত কিউপ্রিক অক্সাইড (CuO) -এর ওপর দিয়ে H2 গ্যাস পাঠালে CuO বিজারিত হয়ে লালচে বাদামী বর্ণের কপার (Cu) ধাতুতে পরিণত হয়। CuO + H2 → Cu + H2O
- ব্যবহার: অ্যামোনিয়া (NH3) ও বনস্পতি ঘি প্রস্তুতিতে, এবং অক্সি-হাইড্রোজেন শিখা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2)
১০. পরীক্ষাগারে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) গ্যাস প্রস্তুতির নীতিটি লেখো।
সাধারণ উষ্ণতায় মার্বেল পাথর (ক্যালসিয়াম কার্বনেট, CaCO3) -এর সঙ্গে লঘু হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড (HCl) -এর বিক্রিয়ায় কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়।
বিক্রিয়া: CaCO3 + 2HCl → CaCl2 + H2O + CO2 ↑
১১. কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস কীভাবে সংগ্রহ করা হয়?
কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস বাতাসের চেয়ে প্রায় ১.৫ গুণ ভারী, তাই বায়ুর ঊর্ধ্ব অপসারণ দ্বারা গ্যাস জারে সংগ্রহ করা হয়।
১২. CO2 গ্যাসের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম লেখো।
- ভৌত ধর্ম: বর্ণহীন, সামান্য অম্ল স্বাদযুক্ত গ্যাস। বাতাসের চেয়ে ভারী এবং জলে দ্রাব্য।
- রাসায়নিক ধর্ম (শনাক্তকরণ):
- এটি নিজে জ্বলে না বা জ্বলতে সাহায্য করে না। জ্বলন্ত পাটকাঠি CO2 পূর্ণ জারে নিভে যায়।
- পরিষ্কার চুন জলকে (ক্যালসিয়াম হাইড্রক্সাইড) ঘোলা করে। Ca(OH)2 + CO2 → CaCO3 ↓ + H2O
১৩. CO2 গ্যাসের ব্যবহার লেখো।
- আগুন নেভানোর কাজে (অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রে)।
- সোডা ওয়াটার ও অন্যান্য ঠান্ডা পানীয় তৈরিতে।
- ইউরিয়া সার প্রস্তুতিতে এবং কঠিন CO2 (শুষ্ক বরফ) হিমায়ক রূপে ব্যবহৃত হয়।
অ্যামোনিয়া (NH3)
১৪. পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া (NH3) গ্যাস প্রস্তুতির নীতিটি লেখো।
অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড (নিশাদল, NH4Cl) এবং পোড়াচুন (ক্যালসিয়াম অক্সাইড, CaO) বা কলিচুন (Ca(OH)2) -এর মিশ্রণকে ১:৩ ভরের অনুপাতে নিয়ে উত্তপ্ত করলে অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয়।
বিক্রিয়া: 2NH4Cl + Ca(OH)2 $\xrightarrow{\text{তাপ}}$ CaCl2 + 2H2O + 2NH3 ↑
১৫. অ্যামোনিয়া গ্যাস কীভাবে সংগ্রহ করা হয় ও শুষ্ক করা হয়?
অ্যামোনিয়া গ্যাস বাতাসের চেয়ে হালকা, তাই বায়ুর নিম্ন অপসারণ দ্বারা সংগ্রহ করা হয়। এটি ক্ষারকীয় গ্যাস হওয়ায় পোড়াচুন (CaO) দ্বারা শুষ্ক করা হয়। (H2SO4 বা P2O5 দ্বারা শুষ্ক করা যায় না কারণ তারা বিক্রিয়া করে ফেলে)।
১৬. অ্যামোনিয়ার ভৌত ও রাসায়নিক ধর্ম লেখো।
- ভৌত ধর্ম: তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত, বর্ণহীন গ্যাস। বাতাসের চেয়ে হালকা এবং জলে অত্যন্ত দ্রাব্য।
- রাসায়নিক ধর্ম:
- ক্ষারকীয় প্রকৃতি: এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারকীয়, তাই লাল লিটমাসকে নীল করে।
- শনাক্তকরণ: HCl (হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড) -সিক্ত কাঁচদণ্ড অ্যামোনিয়া গ্যাসের সংস্পর্শে আনলে NH4Cl (অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড) -এর সাদা ধোঁয়া উৎপন্ন হয়। NH3 + HCl → NH4Cl
চিত্র: অ্যামোনিয়া গ্যাস শনাক্তকরণ।
১৭. অ্যামোনিয়ার ব্যবহার লেখো।
- ইউরিয়া, অ্যামোনিয়াম সালফেট প্রভৃতি নাইট্রোজেন ঘটিত সার প্রস্তুতিতে।
- বরফ তৈরির কারখানায় হিমায়ক রূপে (তরল অ্যামোনিয়া)।
- নাইট্রিক অ্যাসিড প্রস্তুতিতে।
১৮. বিভিন্ন গ্যাস শনাক্তকরণ কীভাবে করবে?
| গ্যাস | শনাক্তকারী পরীক্ষা |
|---|---|
| অক্সিজেন (O2) | একটি নিবন্ত পাটকাঠি গ্যাস জারে প্রবেশ করালে তা উজ্জ্বল শিখায় জ্বলে ওঠে। |
| হাইড্রোজেন (H2) | একটি জ্বলন্ত পাটকাঠি গ্যাস জারে প্রবেশ করালে ‘পপ্’ শব্দ করে নীল শিখায় জ্বলে ওঠে। |
| কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2) | গ্যাসটিকে স্বচ্ছ চুন জলের মধ্যে পাঠালে চুন জল ঘোলা হয়ে যায়। |
| অ্যামোনিয়া (NH3) | ১. তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধ। ২. HCl সিক্ত কাঁচদণ্ড ধরলে সাদা ধোঁয়া (NH4Cl) উৎপন্ন হয়। |