বিষয়: অতীত ও ঐতিহ্য
অধ্যায় ৭: ভারতের জাতীয় আন্দোলনের আদর্শ ও বিবর্তন (প্রকল্প নোটস)
মূল ধারণা ও প্রশ্নাবলী
১. গান্ধীজির ‘সত্যাগ্রহ’ ও ‘অহিংসা’ আদর্শ দুটি কী ছিল?
উত্তর:
- সত্যাগ্রহ: ‘সত্যাগ্রহ’-এর অর্থ হলো ‘সত্যের প্রতি আগ্রহ’ বা সত্যের জন্য সংগ্রাম। গান্ধীজির মতে, এটি ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের একটি নৈতিক পদ্ধতি। এর মূল কথা হলো, প্রতিপক্ষের প্রতি ঘৃণা বা হিংসা না রেখে, আত্মনিগ্রহ বা কষ্টস্বীকারের মাধ্যমে তার হৃদয়ের পরিবর্তন ঘটানো এবং সত্যকে প্রতিষ্ঠা করা।
- অহিংসা: ‘অহিংসা’ গান্ধীজির সংগ্রামের মূল ভিত্তি ছিল। এর অর্থ শুধু হত্যা না করা নয়, বরং মন, কথা বা কাজে—কোনোভাবেই—কারও প্রতি হিংসাত্মক আচরণ না করা। গান্ধীজির কাছে অহিংসা ছিল ভীরুতা নয়, বরং সাহস ও শক্তির প্রতীক।
২. ‘রাওলাট সত্যাগ্রহ’ (১৯১৯) কী ছিল?
উত্তর: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার বিচারপতি রাওলাটের নেতৃত্বে একটি আইন পাস করে (রাওলাট আইন)। এই আইনের দ্বারা পুলিশকে অসামান্য ক্ষমতা দেওয়া হয়। তারা যে-কোনো ভারতীয়কে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করতে পারত এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ ছাড়াই অনির্দিষ্টকাল আটকে রাখতে পারত।
গান্ধীজি এই ‘কালা কানুন’-এর বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রতিবাদের ডাক দেন, যা ‘রাওলাট সত্যাগ্রহ’ নামে পরিচিত। এই সত্যাগ্রহের অঙ্গ হিসেবে হরতাল, প্রতিবাদ সভা ও মিছিল সংগঠিত হয়।
৩. জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড (১৯১৯) সম্পর্কে টিকা লেখো।
উত্তর:
- পটভূমি: রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলাকালীন, ১৯১৯ সালের ১০ই এপ্রিল পাঞ্জাবের অমৃতসরে স্থানীয় নেতা ডঃ সত্যপাল ও ডঃ সইফুদ্দিন কিচলুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
- ঘটনা: এই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে, ১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল (পাঞ্জাবি নববর্ষ বা বৈশাখী উৎসবের দিন) অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগ নামে একটি চারদিক ঘেরা পার্কে বহু মানুষ এক প্রতিবাদ সভায় সমবেত হন।
- হত্যাকাণ্ড: পাঞ্জাবের সামরিক শাসক জেনারেল রেজিনাল্ড ডায়ার এই সভাকে ‘বেআইনি’ ঘোষণা করেন এবং পার্কের একমাত্র প্রবেশপথটি বন্ধ করে নিরস্ত্র জনতার ওপর কোনো সতর্কবাণী ছাড়াই গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। সরকারি হিসেবে প্রায় ৩৭৯ জন (বেসরকারি মতে সহস্রাধিক) মানুষ নিহত হন এবং বহু মানুষ আহত হন।
- গুরুত্ব: এই বর্বর হত্যাকাণ্ড সমগ্র ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর প্রতিবাদে ‘নাইট’ উপাধি ত্যাগ করেন। এই ঘটনা গান্ধীজিকে সর্বভারতীয় অসহযোগ আন্দোলনের পথে ঠেলে দেয়।
৪. ‘অসহযোগ আন্দোলন’ (১৯২০-২২) কেন শুরু হয়েছিল? গান্ধীজি কেন এই আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন?
উত্তর:
শুরু হওয়ার কারণ:
- রাওলাট আইন: রাওলাট আইনের মতো দমনমূলক আইনের বিরোধিতা করা।
- জালিয়ানওয়ালাবাগ: জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার না পাওয়া।
- খিলাফৎ সমস্যা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের সুলতান (খলিফা)-এর ক্ষমতা খর্ব করায় ভারতীয় মুসলমানদের ক্ষোভকে জাতীয় আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করা।
প্রত্যাহারের কারণ (চৌরিচৌরার ঘটনা):
১৯২২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর জেলার ‘চৌরিচৌরা’ নামক স্থানে একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ গুলি চালালে জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা থানা আক্রমণ করে এবং ২২ জন পুলিশকর্মীকে পুড়িয়ে মারে।
আন্দোলন হিংসাত্মক হয়ে ওঠায় গান্ধীজি মর্মাহত হন। তিনি মনে করেন, দেশবাসী তখনও অহিংস সত্যাগ্রহের জন্য প্রস্তুত নয়। তাই তিনি একতরফাভাবে ‘অসহযোগ আন্দোলন’ প্রত্যাহার করে নেন।
৫. ‘খিলাফৎ আন্দোলন’ (১৯১৯-২৪) কী?
উত্তর: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে (১৯১৪-১৮) তুরস্ক ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে জার্মানির পক্ষে যোগ দেয়। যুদ্ধে তুরস্ক পরাজিত হলে, ব্রিটিশ সরকার তুরস্কের সুলতানের (যিনি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের ‘খলিফা’ বা ধর্মগুরু হিসেবে পরিচিত ছিলেন) ক্ষমতা ও সম্মান খর্ব করার উদ্যোগ নেয়।
এর প্রতিবাদে, তুরস্কের খলিফার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার জন্য ভারতের মুসলমানরা (প্রধানত শওকত আলি ও মহম্মদ আলির নেতৃত্বে) যে আন্দোলন শুরু করেন, তাই ‘খিলাফৎ আন্দোলন’ নামে পরিচিত। গান্ধীজি এই আন্দোলনকে হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের সুযোগ হিসেবে দেখে একে সমর্থন জানান এবং অসহযোগ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করেন।
৬. ‘স্বরাজ্য দল’ (১৯২৩) কেন প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর: অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহারের পর জাতীয় কংগ্রেসে হতাশা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে চিত্তরঞ্জন দাশ এবং মতিলাল নেহরু এক নতুন কৌশল গ্রহণ করেন।
তাঁরা মনে করেন, নির্বাচন বর্জন না করে, নির্বাচনে অংশ নিয়ে আইনসভার ভেতরে প্রবেশ করে ব্রিটিশ সরকারের কাজের বিরোধিতা করা উচিত। অর্থাৎ, তাঁদের লক্ষ্য ছিল ‘আইনসভার ভেতরে থেকে’ সরকারের কাজে বাধা সৃষ্টি করা। এই উদ্দেশ্যেই ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁরা কংগ্রেসের মধ্যেই ‘স্বরাজ্য দল’ প্রতিষ্ঠা করেন।
৭. ‘সাইমন কমিশন’ (১৯২৭) কী? ভারতীয়রা এটি বর্জন করেছিল কেন?
উত্তর:
সাইমন কমিশন: ১৯১৯ সালের মন্টেগু-চেমসফোর্ড আইনের কার্যকারিতা পর্যালোচনার জন্য ব্রিটিশ সরকার ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে স্যার জন সাইমনের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করে।
বর্জনের কারণ: এই কমিশনের প্রধান ত্রুটি ছিল যে, এটি ভারতের সাংবিধানিক সংস্কারের জন্য গঠিত হলেও, এর ৭ জন সদস্যের মধ্যে **একজনও ভারতীয় ছিলেন না**। সকল সদস্যই ছিলেন শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ। ভারতীয়রা একে ‘জাতীয় অপমান’ বলে মনে করে। তাই কংগ্রেস, মুসলিম লিগ সহ ভারতের প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দল ‘সাইমন, গো ব্যাক’ (সাইমন, ফিরে যাও) স্লোগান তুলে এই কমিশন বর্জন করে।
৮. ‘আইন অমান্য আন্দোলন’ (১৯৩০-৩৪) কী? ‘ডান্ডি অভিযান’ কেন গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর:
আইন অমান্য আন্দোলন: ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধীজির নেতৃত্বে কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের দমনমূলক ও শোষণমূলক আইনগুলি অহিংসভাবে অমান্য করার ডাক দেয়। এই আন্দোলন ‘আইন অমান্য আন্দোলন’ নামে পরিচিত।
ডান্ডি অভিযান (লবণ সত্যাগ্রহ):
- প্রেক্ষাপট: ব্রিটিশ সরকার লবণ তৈরির ওপর একচেটিয়া অধিকার কায়েম করে এবং লবণের ওপর কর বসায়, যা গরিব মানুষের ওপর বিপুল চাপ সৃষ্টি করে।
- ঘটনা: গান্ধীজি এই লবণ আইনকে অমান্য করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ১৯৩০ সালের ১২ই মার্চ গুজরাটের সবরমতী আশ্রম থেকে পায়ে হেঁটে ২৪১ মাইল পথ অতিক্রম করে ৬ই এপ্রিল ডান্ডি সমুদ্রতীরে পৌঁছান। সেখানে তিনি সমুদ্রের জল থেকে লবণ তৈরি করে প্রতীকীভাবে লবণ আইন ভঙ্গ করেন।
- গুরুত্ব: এই অভিযানের মাধ্যমে সমগ্র ভারতে আইন অমান্য আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। লবণ একটি দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় সামগ্রী হওয়ায় এই আন্দোলন সাধারণ মানুষকে, বিশেষত নারীদের, ব্যাপকভাবে আন্দোলনে সামিল করতে পেরেছিল।
চিত্র: ডান্ডি অভিযানের প্রতীকী রূপ। সবরমতী থেকে ডান্ডি পর্যন্ত লবণ আইন ভঙ্গের যাত্রা।
৯. বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন বলতে কী বোঝো? ভগৎ সিং বা সূর্য সেনের ভূমিকা লেখো।
উত্তর: ভারতের জাতীয় আন্দোলনের একটি ধারা ছিল ‘বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদ’ (Revolutionary Terrorism)। এই পথের অনুসারীরা গান্ধীজির অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। তাঁরা মনে করতেন, সশস্ত্র সংগ্রাম, গুপ্তহত্যা এবং বলপ্রয়োগের মাধ্যমেই ব্রিটিশ শাসনকে উচ্ছেদ করা সম্ভব।
মাস্টারদা সূর্য সেন (চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, ১৯৩০):
- মাস্টারদা সূর্য সেন ছিলেন বাংলার (তৎকালীন চট্টগ্রাম) বিপ্লবী আন্দোলনের প্রধান নেতা।
- তিনি ‘ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি’ (IRA) নামে একটি বিপ্লবী দল গঠন করেন।
- ১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল, তিনি তাঁর অনুগামীদের (যেমন – প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, কল্পনা দত্ত) নিয়ে চট্টগ্রাম পুলিশ অস্ত্রাগার ও সহায়ক বাহিনীর অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেন।
- তাঁরা টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা ধ্বংস করে চট্টগ্রামকে ব্রিটিশ শাসন থেকে চারদিনের জন্য মুক্ত ঘোষণা করেন এবং একটি অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠন করেন।
- পরবর্তীকালে জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে (২২শে এপ্রিল) বিপ্লবীদের সঙ্গে ব্রিটিশ বাহিনীর সংঘর্ষ হয়। যদিও এই বিদ্রোহ দমন করা হয় এবং ১৯৩৪ সালে সূর্য সেনের ফাঁসি হয়, এটি ব্রিটিশ শাসনকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল।
১০. ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলন (১৯৪২) সম্পর্কে টিকা লেখো।
উত্তর:
- প্রেক্ষাপট: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ (১৯৩৯-৪৫) চলাকালীন ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের সম্মতি ছাড়াই ভারতকে যুদ্ধে লিপ্ত করে। কংগ্রেসের নেতারা পূর্ণ স্বাধীনতার বিনিময়ে যুদ্ধে সাহায্যের প্রস্তাব দিলেও ব্রিটিশ সরকার ‘ক্রিপস মিশন’-এর মাধ্যমে সেই দাবি অগ্রাহ্য করে।
- আন্দোলনের ডাক: এর প্রতিবাদে, ১৯৪২ সালের ৮ই আগস্ট, বোম্বাই অধিবেশনে গান্ধীজি ব্রিটিশদের ভারত ত্যাগের চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি দেন এবং ‘করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে’ (করব অথবা মরব) স্লোগান তুলে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ডাক দেন।
- আন্দোলনের প্রকৃতি: ৯ই আগস্ট ভোরের আগেই গান্ধীজি সহ কংগ্রেসের সমস্ত শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নেতার অভাবে এই আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত গণবিদ্রোহে পরিণত হয়।
- তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার: বাংলা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ সহ বিভিন্ন জায়গায় হিংসাত্মক প্রতিরোধ গড়ে ওঠে, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করা হয় এবং বহু স্থানে ব্রিটিশ শাসন অচল হয়ে পড়ে। বাংলার মেদিনীপুর জেলার তমলুকে সতীশচন্দ্র সামন্তের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন ‘তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার’ পর্যন্ত গঠিত হয়েছিল। এই বিদ্রোহকে ‘আগস্ট বিপ্লব’-ও বলা হয়।
১১. সুভাষচন্দ্র বসু ও ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ (INA)-এর ভূমিকা কী ছিল?
উত্তর: সুভাষচন্দ্র বসু গান্ধীজির অহিংস নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি মনে করতেন, সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমেই ভারতকে স্বাধীন করতে হবে।
- গৃহত্যাগ ও ফৌজ গঠন: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটিশদের চোখে ধুলো দিয়ে ভারত ত্যাগ করেন (১৯৪১)। তিনি জার্মানি ও জাপান (ব্রিটিশদের শত্রু) -এর সাহায্য নিয়ে ভারতের স্বাধীনতার জন্য একটি সেনাবাহিনী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।
- INA-এর দায়িত্ব গ্রহণ: তিনি সিঙ্গাপুরে রাসবিহারী বসুর হাতে গড়া ‘আজাদ হিন্দ ফৌজ’ বা ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি’ (INA)-এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন (১৯৪৩)।
- আজাদ হিন্দ সরকার: তিনি সিঙ্গাপুরে ‘আজাদ হিন্দ সরকার’ নামে এক অস্থায়ী স্বাধীন ভারত সরকার প্রতিষ্ঠা করেন।
- দিল্লি চলো: ‘দিল্লি চলো’ ধ্বনি তুলে তাঁর সেনাবাহিনী জাপানিদের সাহায্যে ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্তে কোহিমা ও ইম্ফল পর্যন্ত অগ্রসর হয়। যদিও প্রতিকূল আবহাওয়া এবং জাপানের পরাজয়ের ফলে এই অভিযান ব্যর্থ হয়, তবুও INA-এর এই বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয় এবং স্বাধীনতার পথ প্রশস্ত করে।
১২. ‘নৌ বিদ্রোহ’ (১৯৪৬)-এর গুরুত্ব কী?
উত্তর: ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে, বোম্বাইয়ের ‘তলোয়ার’ নামক যুদ্ধজাহাজের নৌ-সৈনিকরা বর্ণবিদ্বেষ, নিম্নমানের খাবার ও কম বেতনের প্রতিবাদে বিদ্রোহ ঘোষণা করে।
গুরুত্ব:
- এই বিদ্রোহ দ্রুত করাচি, কলকাতা সহ অন্যান্য নৌ-ঘাঁটিতে ছড়িয়ে পড়ে।
- ব্রিটিশ শাসকরা এতদিন যে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর ওপর নির্ভর করে ভারত শাসন করত, সেই বাহিনীর মধ্যেই এই বিদ্রোহ দেখা দেওয়ায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
- এই বিদ্রোহ প্রমাণ করে দেয় যে, ভারতীয় সেনারা আর ব্রিটিশ প্রভুদের হয়ে লড়তে রাজি নয়। এই ঘটনাই ভারতে ব্রিটিশ শাসনের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে দেয় এবং তাদের ভারত ত্যাগের সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করে।