প্রকল্প পত্র: ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়া: সহযোগিতা ও বিদ্রোহ
প্রসেসিং…

বিষয়: অতীত ও ঐতিহ্য

অধ্যায় ৫: ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতিক্রিয়া: সহযোগিতা ও বিদ্রোহ (প্রকল্প নোটস)

মূল ধারণা ও প্রশ্নাবলী

১. ‘ভদ্রলোক’ কাদের বলা হতো? ঔপনিবেশিক শাসনের প্রতি তাদের মনোভাব কী ছিল? [৩ নম্বর]

উত্তর: ব্রিটিশ-ভারতে, হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত, উচ্চবর্ণের, ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে ‘ভদ্রলোক’ বলে উল্লেখ করা হতো।

মনোভাব: এই ‘ভদ্রলোক’ শ্রেণির অনেকেই মনে করতেন যে ব্রিটিশ শাসনের সহগামী হিসেবেই (অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থেকেই) দেশীয় সমাজ ও সংস্কৃতির উন্নয়ন সম্ভব। তাই তাঁরা সাধারণত ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আদর্শের প্রতি আস্থাবান ছিলেন এবং সমাজ সংস্কারের কাজে ব্রিটিশ প্রশাসনের সাহায্যপ্রার্থী হতেন।

২. সতীদাহ প্রথা রদ করার ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা কী ছিল? [৩ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

উত্তর: ঊনবিংশ শতকে বাংলার সমাজ সংস্কারকদের মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিলেন রাজা রামমোহন রায়। তিনি সতীদাহ প্রথার (স্বামীর চিতায় বিধবা স্ত্রীর সহমরণ) বিরুদ্ধে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন।

  • তিনি যুক্তি ও শাস্ত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে সতীদাহ প্রথা অমানবিক এবং শাস্ত্রসম্মত নয়।
  • তিনি এই প্রথার বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেন এবং ব্রিটিশ প্রশাসনকে আইন প্রণয়নের জন্য আবেদন জানান।
  • তাঁর এই নিরন্তর আন্দোলনের ফলেই ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর-জেনারেল লর্ড বেন্টিঙ্ক আইন জারি করে সতীদাহ প্রথা রদ (নিষিদ্ধ) করেন।

৩. বিধবা বিবাহ প্রচলনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান আলোচনা করো। [৫ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

উত্তর: ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিধবা নারীদের পুনরায় বিবাহের পক্ষে এক শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলেন।

  1. শাস্ত্রীয় যুক্তি: রামমোহনের মতোই, বিদ্যাসাগরও প্রাচীন শাস্ত্র (যেমন – ‘পরাশর সংহিতা’) থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমাণ করেন যে, বিধবা বিবাহ শাস্ত্রসম্মত।
  2. আবেদন: তিনি এই প্রথা চালুর জন্য ব্রিটিশ প্রশাসনের কাছে বহু স্বাক্ষর সম্বলিত আবেদনপত্র জমা দেন।
  3. আইন প্রণয়ন: তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলেই ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার ‘হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ আইন’ জারি করে বিধবা বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেয়।
  4. ব্যক্তিগত উদ্যোগ: আইন পাস হওয়ার পরও সমাজে এই প্রথা গ্রহণযোগ্য ছিল না। তাই বিদ্যাসাগর নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও খরচে বেশ কিছু বিধবা বিবাহের আয়োজন করেন।

৪. ‘নব্যবঙ্গ’ বা ‘ইয়ং বেঙ্গল’ গোষ্ঠী কাদের বলা হতো? তাদের প্রধান মতামত কী ছিল? [৩ নম্বর]

উত্তর: কলকাতার হিন্দু কলেজের শিক্ষক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও-র অনুগামী ছাত্রদের ‘নব্যবঙ্গ’ বা ‘ইয়ং বেঙ্গল’ গোষ্ঠী বলা হতো।

প্রধান মতামত:

  • তাঁরা ছিলেন যুক্তিবাদী এবং স্বাধীন চিন্তাভাবনার সমর্থক।
  • তাঁরা জাতপাত, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ এবং মূর্তিপূজার মতো প্রচলিত সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।
  • তাঁরা ব্রিটিশ শাসন ও ইংরেজি শিক্ষার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাতেন।

৫. শিক্ষা সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা লেখো। [৫ নম্বর]

উত্তর: ঊনবিংশ শতকে বাংলার শিক্ষা সংস্কারে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা ছিল বহুমুখী:

  1. সংস্কৃত কলেজের সংস্কার: তিনি সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ থাকাকালীন ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য ছাড়াও কায়স্থ ছাত্রদের কলেজে পড়ার সুযোগ করে দেন। তিনি পাঠ্যক্রমে ইংরেজি এবং পাশ্চাত্য গণিত অন্তর্ভুক্ত করেন।
  2. মাতৃভাষা শিক্ষা: তিনি বাংলা ভাষাকে সহজবোধ্য করার জন্য ‘বর্ণপরিচয়’-এর মতো আদর্শ শিশু পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন।
  3. নারী শিক্ষা: তিনি নারীশিক্ষার প্রসারে প্রবল উদ্যোগী ছিলেন। জন এলিয়ট ড্রিঙ্কওয়াটার বেথুনের (বীটন) স্কুল প্রতিষ্ঠায় তিনি সক্রিয় সাহায্য করেন।
  4. বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা: স্কুল পরিদর্শকের কাজ করার সময় তিনি নিজের খরচে বাংলার বিভিন্ন জেলায় একাধিক মডেল স্কুল (আদর্শ বিদ্যালয়) এবং মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

৬. জ্যোতিরাও ফুলে এবং সাবিত্রী বাঈ ফুলে কেন স্মরণীয়? [৩ নম্বর]

উত্তর: মহারাষ্ট্রের সমাজ সংস্কার আন্দোলনে জ্যোতিরাও ফুলে ও তাঁর স্ত্রী সাবিত্রী বাঈ ফুলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

  • তাঁরা ব্রাহ্মণদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে নিম্নবর্গীয় ও অস্পৃশ্য মানুষদের সামাজিক মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করেন।
  • জ্যোতিরাও ফুলে ‘সত্যশোধক সমাজ’ প্রতিষ্ঠা করেন।
  • তাঁরা নারীশিক্ষা প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা নেন এবং ১৮৫১ খ্রিস্টাব্দে পুনা শহরে মেয়েদের জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।

৭. ‘আলিগড় আন্দোলন’ বলতে কী বোঝো? [৩ নম্বর]

উত্তর: ঊনবিংশ শতকের দ্বিতীয় ভাগে মুসলিম সমাজে সংস্কার আনার জন্য স্যর সৈয়দ আহমদ খান যে আন্দোলন শুরু করেন, তা ‘আলিগড় আন্দোলন’ নামে পরিচিত।

  • তিনি মনে করতেন, আধুনিক ইংরেজি ও বিজ্ঞান শিক্ষার মাধ্যমেই মুসলিম সমাজের উন্নতি সম্ভব।
  • এই উদ্দেশ্যে তিনি ১৮৭۵ খ্রিস্টাব্দে ‘আলিগড় অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন (যা পরে আলিগড় মুসলিম ইউনিভার্সিটিতে পরিণত হয়)।
  • তিনি আধুনিক যুক্তিবাদ ও বিজ্ঞানের আলোয় কোরানকে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলেন এবং পুরোনো অন্ধ বিশ্বাসের বিরোধিতা করেন।

৮. ‘দিকু’ কাদের বলা হতো? সাঁওতাল বিদ্রোহে (হুল) তাদের ভূমিকা কী ছিল? [৩ নম্বর]

উত্তর: ‘দিকু’ একটি সাঁওতালি শব্দ, যার অর্থ ‘বহিরাগত’। সাঁওতাল পরগনা এলাকায় বাইরে থেকে আসা জমিদার, মহাজন, ইজারাদার ও ব্যবসায়ীদের সাঁওতালরা ‘দিকু’ বলত।

ভূমিকা: এই দিকুরাই ছিল সাঁওতাল বিদ্রোহের (১৮৫৫-৫৬) প্রধান কারণ। জমিদার ও ইজারাদাররা সাঁওতালদের জমি কেড়ে নিত এবং মহাজনরা চড়া সুদে ঋণ দিয়ে তাদের সর্বস্বান্ত করত। এই মিলিত শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধেই সাঁওতালরা বিদ্রোহ (‘হুল’) ঘোষণা করে।

৯. সাঁওতাল বিদ্রোহ (হুল)-এর (১৮৫৫-৫৬) প্রধান কারণগুলি কী ছিল? [৫ নম্বর]

উত্তর: সাঁওতাল বিদ্রোহের প্রধান কারণগুলি হলো:

  1. রাজস্বের চাপ: ঔপনিবেশিক সরকারের চালু করা নতুন ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থার ফলে সাঁওতালদের ওপর 엄청 করের বোঝা চাপে।
  2. ‘দিকু’দের শোষণ: বহিরাগত জমিদার ও মহাজনরা (‘দিকু’) চড়া সুদে ঋণ দিয়ে এবং জালিয়াতি করে সাঁওতালদের জমি কেড়ে নিত।
  3. বেগার শ্রম: ইউরোপীয় কর্মচারীরা সাঁওতালদের জোর করে রেলপথ তৈরির কাজে ‘বেগার’ (বিনাশ্রমে) খাটাতো।
  4. সংস্কৃতিতে আঘাত: সাঁওতালদের নিজস্ব আইন, বিচার ও সামাজিক সংস্কৃতি বিপন্ন হয়ে পড়েছিল।
  5. প্রশাসনিক উদাসীনতা: ব্রিটিশ প্রশাসন ও আদালত এই শোষণের বিরুদ্ধে সাঁওতালদের আবেদনে কর্ণপাত করত না।

এই শোষণ থেকে মুক্তির জন্যই সিধু, কানহু, চাঁদ ও ভৈরবের নেতৃত্বে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করে।

১০. ‘বারাসাত বিদ্রোহ’ (নারকেলবেড়িয়া বিদ্রোহ) কী? [৩ নম্বর]

উত্তর: বাংলায় ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা ছিলেন মির নিসার আলি বা তিতুমির। তিনি স্থানীয় জমিদার, নীলকর ও ব্রিটিশ প্রশাসনের অত্যাচারের বিরুদ্ধে বারাসাত অঞ্চলে একটি বিদ্রোহ সংগঠিত করেন। এটি ‘বারাসাত বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত।

তিতুমির নারকেলবেড়িয়া গ্রামে একটি ‘বাঁশের কেল্লা’ তৈরি করে নিজেকে ‘বাদশাহ’ ঘোষণা করেন এবং ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘোষণা করেন। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ বাহিনী কামান দেগে এই কেল্লা ধ্বংস করে দেয় এবং তিতুমির যুদ্ধে মারা যান।

১১. ‘নীল বিদ্রোহ’ (১৮৫৯-৬০) কেন ঘটেছিল? এই বিদ্রোহে শিক্ষিত সমাজের ভূমিকা কী ছিল? [৫ নম্বর] [গুরুত্বপূর্ণ]

উত্তর:

নীল বিদ্রোহের কারণ:

  1. দাদন প্রথা: নীলকর সাহেবরা কৃষকদের ‘দাদন’ বা অগ্রিম টাকা নিতে বাধ্য করত এবং তার বিনিময়ে বাজার দরের চেয়ে অনেক কম দামে নীল বিক্রি করতে বাধ্য করত।
  2. চাষির ক্ষতি: যে জমিতে নীল চাষ হতো, তাতে অন্য ফসল ফলত না, ফলে কৃষকদের খাদ্যসংকট দেখা দিত।
  3. অত্যাচার: কোনো কৃষক নীল চাষ করতে অস্বীকার করলে নীলকর ও তাদের লাঠিয়াল বাহিনী কৃষকদের ওপর অকথ্য অত্যাচার করত, তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিত।

শিক্ষিত সমাজের ভূমিকা: এই বিদ্রোহের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল বাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির (‘ভদ্রলোক’) সমর্থন।

  • পত্রিকা: হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘হিন্দু প্যাট্রিয়ট’ পত্রিকায় নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং চাষিদের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন।
  • সাহিত্য: দীনবন্ধু মিত্র তাঁর ‘নীলদর্পণ’ (১৮৬০) নাটকে নীলকরদের বর্বর অত্যাচার এবং কৃষকদের দুর্দশার করুণ চিত্র তুলে ধরেন, যা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে।
  • আইনি সহায়তা: অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি কৃষকদের আইনি সহায়তা দেন। খ্রিস্টান মিশনারি রেভারেন্ড জেমস লং ‘নীলদর্পণ’-এর ইংরেজি অনুবাদ করানোর ফলে কারারুদ্ধও হন।

১২. ‘মুন্ডা উলগুলান’ (১৮৯৯-১৯০০) সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত টিকা লেখো। [৩ নম্বর]

উত্তর: ‘উলগুলান’ কথার অর্থ হলো ‘ভয়ঙ্কর বিশৃঙ্খলা’ বা ‘বিদ্রোহ’। ঊনবিংশ শতকের শেষে (১৮৯৯-১৯০০) রাঁচি ও ছোটনাগপুর অঞ্চলে মুন্ডা উপজাতিরা যে বিদ্রোহ করে, তা ‘মুন্ডা উলগুলান’ নামে পরিচিত।

এই বিদ্রোহের নেতা ছিলেন বিরসা মুন্ডা। সাঁওতালদের মতোই, মুন্ডাদের জমি ‘দিকু’ বা বহিরাগতদের হাতে চলে যাওয়া, জমিদার-মহাজনদের শোষণ, খ্রিস্টান মিশনারিদের কার্যকলাপ এবং ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধেই ছিল এই বিদ্রোহ। বিরসার লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে ‘বিরসা রাজ’ প্রতিষ্ঠা করা। ব্রিটিশ বাহিনী এই বিদ্রোহ কঠোর হাতে দমন করে।

১৩. ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহের (মহাবিদ্রোহ) প্রত্যক্ষ কারণ কী ছিল? [২ নম্বর]

উত্তর: ১৮৫৭-র বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণ ছিল ‘এনফিল্ড রাইফেল’-এর টোটা সংক্রান্ত গুজব। সিপাহিদের মধ্যে গুজব রটে যায় যে, এই নতুন রাইফেলের টোটাগুলিতে গোরু ও শূকরের চর্বি মেশানো আছে। এই টোটাগুলি রাইফেলে ভরার আগে দাঁত দিয়ে কাটতে হতো, যা হিন্দু ও মুসলিম উভয় সিপাহিদেরই ধর্মনাশের সামিল ছিল। এই ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাতই বিদ্রোহের আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

এনফিল্ড রাইফেলের টোটা বিতর্ক চর্বি মাখানো কাগজের আবরণ দাঁত দিয়ে কাটতে হতো

চিত্র: এনফিল্ড রাইফেলের টোটা। এই টোটার আবরণেই গোরু ও শূকরের চর্বি মেশানোর গুজব রটে।

১৪. ১৮৫৭-র বিদ্রোহে মঙ্গল পান্ডের ভূমিকা কী ছিল? [২ নম্বর]

উত্তর: মঙ্গল পান্ডে ছিলেন ব্যারাকপুর সেনাছাউনির একজন সিপাহি। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে (২৯শে মার্চ) তিনি চর্বি মাখানো টোটা ব্যবহারে অসম্মত হন এবং বিদ্রোহ ঘোষণা করে একজন ইউরোপীয় সেনা আধিকারিককে গুলি করেন। যদিও তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেননি, তবুও মঙ্গল পান্ডের এই ঘটনাই ছিল ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহের সূচনাপর্ব বা ‘স্ফুলিঙ্গ’।

১৫. কেন ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে ‘সিপাহি বিদ্রোহ’ বলা হয়? [২ নম্বর]

উত্তর: এই বিদ্রোহ প্রধানত সিপাহিদের (বিশেষত বেঙ্গল আর্মির সিপাহিদের) হাত ধরে শুরু হয়েছিল এবং সিপাহিরাই ছিল এই বিদ্রোহের মূল চালিকাশক্তি। বিদ্রোহের প্রত্যক্ষ কারণটিও (চর্বি মাখানো টোটা) ছিল সম্পূর্ণভাবে সেনাবাহিনী-কেন্দ্রিক। এই কারণেই অনেকে, বিশেষত ব্রিটিশ ঐতিহাসিকরা, একে ‘সিপাহি বিদ্রোহ’ বলে থাকেন।

১৬. কেন ১৮৫৭-র বিদ্রোহকে ‘গণবিদ্রোহ’ বা ‘জাতীয় বিদ্রোহ’ বলা হয়? [৩ নম্বর]

উত্তর: যদিও বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল সিপাহিদের হাতে, কিন্তু তা দ্রুত সিপাহিদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি।

  • উত্তর-পশ্চিম প্রদেশ ও অযোধ্যার মতো বিশাল অঞ্চলে সিপাহিদের সঙ্গে অসামরিক সাধারণ জনগণ, কৃষক, কারিগর এবং স্থানীয় অভিজাতরা (যেমন – নানা সাহেব, ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাঈ, কুনওয়ার সিং) একজোট হয়ে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়।
  • বিদ্রোহীরা মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফরকে ‘হিন্দুস্থানের সম্রাট’ ঘোষণা করে, যা একটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক চেতনার ইঙ্গিত দেয়।

বিদ্রোহের এই ব্যাপক চরিত্র এবং বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণের জন্যই অনেকে একে ‘গণবিদ্রোহ’ বা ‘ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেন।

১৭. ১৮৫৭-র বিদ্রোহে বাঙালি শিক্ষিত সমাজের মনোভাব কী ছিল? [২ নম্বর]

উত্তর: ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহের প্রতি বাংলার ইংরেজি শিক্ষিত ‘ভদ্রলোক’ বা বুদ্ধিজীবী সমাজ মূলত উদাসীন বা বিরোধী ছিল। তাঁরা এই বিদ্রোহকে ‘অশিক্ষিত’ সিপাহিদের ‘হাঙ্গামা’ বলে মনে করতেন এবং ব্রিটিশ শাসনের পক্ষে সওয়াল করেন। তাঁরা ভয় পেয়েছিলেন যে, বিদ্রোহ সফল হলে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটবে এবং ‘অসভ্য’ সিপাহিদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, যা তাঁদের সামাজিক সংস্কার ও অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu
BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu