ষষ্ঠ পাঠ: গড়াই নদীর তীরে (নোট)
প্রসেসিং হচ্ছে…

বাংলা সাহিত্য (অষ্টম শ্রেণি)

ষষ্ঠ পাঠ: গড়াই নদীর তীরে (জসীমউদ্দীন) – নোটস ও উত্তর

**উৎস:** বালুচর (কাব্যগ্রন্থ) | **বিষয়বস্তু:** গড়াই নদীর তীরে গ্রামীণ কুটির ও প্রকৃতির শান্ত-স্নিগ্ধ পরিবেশের সঙ্গে মানব-প্রেমের চিত্রায়ণ।

১. কবিতা পরিচিতি ও সারমর্ম (Core Theme)

পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের **’গড়াই নদীর তীরে’** কবিতাটি বাংলার গ্রামীণ জীবনের এক মন মুগ্ধকর চিত্র তুলে ধরেছে। এই কবিতায় গড়াই নদীর শান্ত পার, সবুজ প্রকৃতি এবং একটি ছোটো কুটিরে প্রেম-প্রীতির বন্ধনে থাকা এক যুগলের জীবন যেন এক সরল, স্নিগ্ধ রূপে মূর্ত হয়ে উঠেছে।

মূল বক্তব্য:

  • **কুটির ও পরিবেশ:** গড়াই নদীর তীরে, একটি জীর্ণ কুটিরে রয়েছে কবির স্বপ্নের বাসস্থান। কুটিরটি **শাওন মাসের মেঘের মতো কালো**। এর চারপাশে রয়েছে লতার ঝোপ ও **আঁধার ঘেরা ডালিম** গাছ, যা এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
  • **প্রাকৃতিক উপাদান:** কবিতায় **ফুটফুটে জোছনা**, **পায়রার গুঞ্জরন**, **আঁধার-আঁধার গন্ধ** এবং **কাজল-নদীর শীতল জল**-এর উল্লেখ রয়েছে। এই সবকিছুই প্রকৃতির শান্ত, স্নিগ্ধ রূপকে তুলে ধরে।
  • **প্রেম ও মায়া:** এই কুটিরে কবির প্রেমিকা বা প্রিয়তমার বসবাস। কুটিরের মধ্যে তার আলসে ঘুম এবং হাসি যেন এই পরিবেশকে আরও প্রেমময় করে তুলেছে।
  • **শান্তির আহ্বান:** কবিতাটি সবশেষে জীবনের জটিলতা থেকে মুক্তি পেয়ে, এই **শান্ত-স্নিগ্ধ গ্রামীণ প্রকৃতির কোলে** আশ্রয় খোঁজার এক গভীর বাসনা প্রকাশ করে। কবি এই কুটির এবং তার প্রিয়তমাকে নিয়ে জীবনভর সুখে থাকতে চান।

২. গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ও ব্যাখ্যা

  • **শাওন:** শ্রাবণ মাস।
  • **কাজল-নদী:** নদীর কালো বা গভীর জল, যা কাজলের মতো সুন্দর।
  • **সিন্দুক:** মূল্যবান জিনিস রাখার জন্য ব্যবহৃত বড়ো পেটি বা বাক্স।
  • **নজর:** দৃষ্টি, মনোযোগ বা দেখভাল।
  • **ছাপর:** খড়ের ছাউনি।
  • **ফুটফুটে জোছনা:** উজ্জ্বল, স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না।
  • **গুঞ্জরিয়া:** গুঞ্জন শব্দ করতে করতে।
  • **নিরতিশয়:** অতিরিক্ত, খুব বেশি।

৩. হাতেকলমে (অনুশীলনী প্রশ্ন ও উত্তর)

(অনুশীলনী থেকে নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর নিচে দেওয়া হলো:)

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর (মান: ১-২ নম্বর):

১. ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতাটির রচয়িতা কে? [১ নম্বর]

‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতাটির রচয়িতা হলেন পল্লীকবি **জসীমউদ্দীন**।

২. কুটিরটি কেমন দেখতে? [২ নম্বর]

কুটিরটি **শাওন মাসের মেঘের মতো কালো** এবং টিনের চালা না থাকায় সেটি **ছাপর** (খড়ের ছাউনি)-এর মতো দেখতে। এর চারপাশে লতার ঝোপ রয়েছে।

৩. কবি নদীর জলে কিসের ছাপ দেখতে পান? [১ নম্বর]

কবি নদীর জলে **ফুটফুটে জোছনার** ছাপ দেখতে পান।

৪. কবি কেন কুটির ছেড়ে যেতে চান না? [২ নম্বর]

কবি এই শান্ত কুটিরে **প্রিয়তমার সান্নিধ্য** পান এবং এখানকার **স্নিগ্ধ প্রকৃতি** তাঁকে শান্তি দেয়। তাই তিনি এই ভালোবাসার ঘর ছেড়ে যেতে চান না।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন (মান: ৩ নম্বর):

৫. ‘আঁধার ঘেরা ডালিম গাছে/ জোনাক-জ্যোতি ঝরে’ – ব্যাখ্যা করো। [৩ নম্বর]

নিহিতার্থ: এই পঙ্ক্তিটিতে গ্রামীণ সন্ধ্যার **মায়াবী চিত্রকল্প** ফুটে উঠেছে।
ডালিম গাছটি **আঁধার ঘেরা** হওয়ায় তার পাতা ও ডালপালাগুলি অন্ধকারে ঢাকা পড়ে আছে। ঠিক সেই সময়, ডালিম গাছের চারপাশে **জোনাকি পোকা** জ্বলতে শুরু করেছে। এই জোনাকিদের মিটমিট আলোকেই কবি **’জোনাক-জ্যোতি’** বা আলোর কণা বলে উল্লেখ করেছেন, যা প্রকৃতির কোলে এক **রহস্যময় সৌন্দর্যের** সৃষ্টি করেছে।

৬. ‘কাজল-নদীর শীতল জলে/ কলসখানি ভরে’ – এই মন্তব্যের অন্তর্নিহিত অর্থ কী? [৩ নম্বর]

এই উক্তিটি গ্রামীণ জীবনের **শান্ত ও স্বাভাবিক রুটিন** এবং **নদীর সঙ্গে মানুষের গভীর সম্পর্ককে** তুলে ধরে।

  • **কাজল-নদী:** নদীর জল গভীর হওয়ায় তা কাজলের মতো কালো বা শীতল, যা নদীর সতেজতার প্রতীক।
  • **অন্তর্নিহিত অর্থ:** কবি বোঝাতে চেয়েছেন, তার প্রিয়তমা প্রতিদিন নদীর সেই **শীতল ও নির্মল জল** কলসে ভরে নিয়ে আসে। এটি কেবল জল আনার কাজ নয়, বরং কবির **প্রিয়তমার দৈনন্দিন কাজ** এবং সেই **জলপূর্ণ কলসটি** কবির কাছে ভালোবাসার প্রতীক।
এতে গ্রামীণ জীবনের সতেজতা ও সরলতা প্রকাশ পেয়েছে।

৭. ‘সেই কুটিরে শান্তিতে আজো / জীবন বাঁচে যদি’ – কবি কেন কুটিরে শান্তি খুঁজেছেন? [৩ নম্বর]

কবি এই গ্রামীণ কুটিরে শান্তি খুঁজেছেন, কারণ:

  • **নিসর্গ-সান্নিধ্য:** কুটিরটি গড়াই নদীর তীরে, **শান্ত ও স্নিগ্ধ প্রকৃতির** কোলে অবস্থিত। এখানে কোনো কৃত্রিমতা বা কোলাহল নেই।
  • **প্রেমের বন্ধন:** এই কুটিরে তাঁর প্রিয়তমার উপস্থিতি রয়েছে, যা কবির জীবনকে **প্রেম ও প্রীতিতে** ভরিয়ে তুলেছে।
  • **সরল জীবন:** কবি জীবনের জটিলতা ও সমস্যাগুলি ছেড়ে এসে এই **গ্রামীণ সরল জীবনে** এক স্বস্তির সন্ধান পেয়েছেন, যেখানে তিনি নির্দ্বিধায় জীবন কাটাতে চান।

রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর (মান: ৫ নম্বর):

৮. ‘গড়াই নদীর তীরে’ কবিতা অবলম্বনে পল্লী প্রকৃতির যে স্নিগ্ধ ছবিটি ফুটে উঠেছে, তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো। [৫ নম্বর]

পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের এই কবিতাটি গ্রামীণ বাংলার প্রকৃতির এক **স্নিগ্ধ, মায়াবী ও শান্ত** ছবি আমাদের সামনে তুলে ধরে। এই প্রকৃতি কেবল পটভূমি নয়, বরং এটি কবির ভালোবাসার আশ্রয়:

  1. **শান্ত নদী ও কুটির:** প্রকৃতির কেন্দ্রবিন্দু হলো **গড়াই নদী**, যার জল **কাজলের মতো শীতল**। নদীর তীরে কবির স্বপ্নের কুটিরটি **শাওন মাসের মেঘের মতো কালো**। এই কুটিরটি যেন প্রকৃতিরই অংশ।
  2. **আলো-আঁধারের খেলা:** দিনের বেলায় **পায়রার গুঞ্জরন** শোনা যায়, আর রাতে **ফুটফুটে জোছনা** নদীর জলে ছাপ ফেলে। **আঁধার-আঁধার গন্ধ** এবং **ডালিম গাছে জোনাক-জ্যোতি**-এর খেলা প্রকৃতির মধ্যে এক **রহস্যময় মায়া** সৃষ্টি করে।
  3. **নিরাপত্তা ও আশ্রয়:** চারিদিকে লতার ঝোপ, **শ্যাওলা-ধরা ঘাট** এবং **লুকানো পথ** এই পরিবেশকে এক শান্ত ও নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দেখায়। প্রকৃতি এখানে কঠোর নয়, বরং **স্নেহময়**।
  4. **জীবন্ত উপাদান:** কবিতাটিতে কোনো জাঁকজমক নেই, আছে **শান্ত পাখির গুঞ্জরন**, মৃদু বাতাস এবং নদীর শীতলতা—যা সব মিলিয়ে এক **নিখাদ গ্রামীণ পরিবেশের** জন্ম দিয়েছে, যেখানে জীবনের সরলতা ও সতেজতা বিরাজ করে।

এইভাবে, কবি জসীমউদ্দীন তাঁর সহজ ভাষায় গ্রামীণ প্রকৃতির এমন এক স্নিগ্ধ ছবি এঁকেছেন, যেখানে নাগরিক জীবনের কোলাহল নেই, আছে কেবল **নিরবচ্ছিন্ন শান্তি ও প্রেম**।

BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu
BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu