অষ্টম পাঠ: সুভা (নোট)
প্রসেসিং হচ্ছে…

বাংলা সাহিত্য (অষ্টম শ্রেণি)

অষ্টম পাঠ: সুভা (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) – নোটস ও উত্তর

**উৎস:** ছোটগল্প | **বিষয়বস্তু:** মূক-বধির কিশোরী সুভার নিঃসঙ্গতা, প্রকৃতির সঙ্গে তার নির্বাক প্রেম এবং সমাজের নীরব বঞ্চনা।

১. গল্প পরিচিতি ও সারমর্ম (Core Theme)

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের **’সুভা’** গল্পটি মূলত একজন **মূক-বধির কিশোরীর অন্তর্জীবনের জটিলতা** ও **মানবিক সম্পর্ক স্থাপনের আকাঙ্ক্ষাকে** কেন্দ্র করে আবর্তিত। সুভা কথা বলতে পারে না বলে পরিবার ও সমাজের কাছে সে যেন এক **অতিরিক্ত বোঝা**। তার এই বাচাহীনতার সুযোগে প্রকৃতির নীরব উপাদান—যেমন নদী, গাছপালা এবং বাচাহীন প্রাণী (যেমন গোয়ালঘরের দুটি গাভী)—তার একমাত্র **নির্ভরশীল ও সহানুভূতিশীল বন্ধু** হয়ে ওঠে। গল্পটি সুভার প্রতি সমাজের নিষ্ঠুরতা, পিতার স্নেহ এবং সর্বশেষে তার জীবন থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তকে করুণ রসে তুলে ধরে।

মূল বক্তব্য:

  • **মূকতার যন্ত্রণা:** সুভা (সুভাষিণী) কথা বলতে পারে না বলে তার নিজের ঘরে তার স্থানটি সঙ্কুচিত। সে সমাজের কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে পারে না।
  • **প্রকৃতির আশ্রয়:** তার বাকহীনতার কারণে প্রকৃতি ও প্রাণীজগতের সঙ্গে তার গভীর এক **নির্বাক বোঝাপড়া** তৈরি হয়। বিশেষত, গোয়ালঘরের **সর্বশী ও পাঙ্গুলি** নামে দুটি গাভীর প্রতি তার ছিল নিবিড় স্নেহ।
  • **পিতার স্নেহ ও মাতার বিরক্তি:** সুভার পিতা **বাণীকণ্ঠ** তাকে গভীরভাবে ভালোবাসলেও, মাতা তাকে নিজের ত্রুটি মনে করে বিরক্ত হন।
  • **প্রত্যাখ্যান ও বিদায়:** গল্পের শেষে সুভার বিবাহ দিতে না পারায় পিতা তাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যা সুভার কাছে **প্রকৃতির কাছ থেকে চিরবিদায়**। এই বিচ্ছেদ সুভার বেদনাকে আরও গভীর করে তোলে।

২. গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ও ব্যাখ্যা

  • **সুভা (সুভাষিণী):** গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। সে মূক-বধির হওয়ায় সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন। সে প্রকৃতি ও পশুপাখির মধ্যে এক নীরব ভাষা খুঁজে পায়। তার চোখ ছিল **’পল্লববিশিষ্ট’** ও কালো।
  • **বাণীকণ্ঠ:** সুভার পিতা। তিনি সুভাকে খুব ভালোবাসেন এবং তার ভবিষ্যতের জন্য চিন্তিত। সমাজের চাপে তিনি নিরুপায় হয়ে পড়েন।
  • **সুভার মাতা:** সুভাকে নিজের ত্রুটি মনে করেন এবং তাকে অপছন্দ করেন। তার কাছে সুভা যেন এক দুর্ভাগ্যের কারণ।
  • **প্রতাপ:** সুভার গ্রামের এক যুবক, যার মাছ ধরার অভ্যেস ছিল। সুভা তাকে দূর থেকে অনুসরণ করে এবং তার উপস্থিতি সুভার নিঃসঙ্গ জীবনে কিছুটা শান্তি এনে দেয়। প্রতাপ সুভাকে অবজ্ঞা না করে **’সু’** বলে ডাকত।
  • **সর্বশী ও পাঙ্গুলি:** গোয়ালঘরের দুটি গাভী। এরাই সুভার একমাত্র **বাচাহীন বন্ধু**, যারা সুভার নীরব ভাষা বুঝতে পারত।

৩. হাতেকলমে (অনুশীলনী প্রশ্ন ও উত্তর)

(অনুশীলনী থেকে নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর নিচে দেওয়া হলো:)

সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর (মান: ১-২ নম্বর):

১. সুভার পুরো নাম কী ছিল? [১ নম্বর]

সুভার পুরো নাম ছিল **সুভাষিণী**।

২. সুভার পিতার নাম কী? [১ নম্বর]

সুভার পিতার নাম ছিল **বাণীকণ্ঠ**।

৩. সুভার গোয়ালঘরের বন্ধু দুটি গাভীর নাম কী? [২ নম্বর]

সুভার গোয়ালঘরের বন্ধু দুটি গাভীর নাম ছিল **সর্বশী** ও **পাঙ্গুলি**।

৪. সুভার প্রতি তার মা ও বাবার মনোভাব কেমন ছিল? [২ নম্বর]

সুভার মা তাকে **নিজের ত্রুটি** মনে করে বিরক্ত হতেন, কিন্তু বাবা **বাণীকণ্ঠ** তাকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন।

সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন (মান: ৩ নম্বর):

৫. সুভার চোখকে রবীন্দ্রনাথ কী বলে বর্ণনা করেছেন? এই বর্ণনার সার্থকতা কোথায়? [৩ নম্বর]

রবীন্দ্রনাথ সুভার চোখকে **’পল্লববিশিষ্ট’** ও কালো বলে বর্ণনা করেছেন।

  • **বর্ণনার সার্থকতা:** সুভা কথা বলতে পারে না বলে তার মনের সমস্ত ভাব তার **চোখের মাধ্যমেই** প্রকাশ পায়। তার চোখের ভাষা গভীর, যা সহজে কেউ বুঝতে পারে না। তার বাচাহীন অন্তরের বেদনা, নীরব ভালোবাসা ও গভীর অনুভূতি এই **’পল্লববিশিষ্ট’** চোখের মাধ্যমেই মূর্ত হয়ে ওঠে।

৬. ‘সুভার প্রধান সখা ছিল দুটি গাভী।’—গাভী দুটি কীভাবে সুভার বন্ধু হয়ে উঠেছিল? [৩ নম্বর]

গোয়ালঘরের গাভী **সর্বশী ও পাঙ্গুলি** সুভার প্রধান সখা ছিল কারণ:

  • **নির্বাক সম্পর্ক:** সুভা কথা বলতে পারত না, আর গাভী দুটিও ছিল **বাচাহীন**। তাই তাদের মধ্যে একটি **সহজ ও নীরব বোঝাপড়া** তৈরি হয়েছিল।
  • **সহানুভূতি:** সুভা গাভী দুটির সঙ্গে কথা না বলেও তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে, তাদের পাশে বসে নিজের মনের দুঃখ প্রকাশ করত, আর গাভী দুটিও সুভার মনের ভাব **যেন বুঝতে পারত**।
  • **আশ্রয়:** সুভা যখন সকলের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত, তখন এই প্রাণী দুটির কাছে সে **স্নেহ ও সহানুভূতিপূর্ণ আশ্রয়** খুঁজে পেত।

৭. সুভা নদীর তীরে গিয়ে প্রকৃতিকে কী রূপে দেখত? [৩ নম্বর]

সুভা নদীর তীরে গিয়ে প্রকৃতিকে তার **নির্ভরযোগ্য ও সহানুভূতিশীল বন্ধু** রূপে দেখত।

  • **নীরব ভাষা:** নদী ছিল তার কাছে তার মতো **বিশাল ও বাচাহীন**। নদীর কলকল ধ্বনি সুভার কাছে কোনো ভাষা মনে হতো না, বরং তা তার **গভীর হৃদয়ের দীর্ঘশ্বাস** বা নীরব অভিমানেরই প্রতিধ্বনি ছিল।
  • **নিঃসঙ্গতার সঙ্গী:** যখন সুভা নিঃশব্দে নদীর তীরে বসে থাকত, তখন প্রকৃতি তাকে **আদর ও স্নেহ** দিয়ে ঘিরে থাকত, তাকে কখনোই **প্রত্যাখ্যান** করত না।
  • **আত্মিক বন্ধন:** সুভার মনে হতো নদী যেন তাকে তার **গোপন কথা** বলতে চায় এবং সুভার নীরব বেদনাকেও গভীর মমতায় বুঝতে পারে।

রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর (মান: ৫ নম্বর):

৮. ‘সুভা’ গল্পে মূক-বধির কিশোরীর অন্তর্জীবনের একাকিত্ব ও প্রকৃতির সঙ্গে তার আত্মিক সম্পর্ক কীভাবে ফুটিয়ে উঠেছে, আলোচনা করো। [৫ নম্বর]

রবীন্দ্রনাথের ‘সুভা’ গল্পটি মূক-বধির কিশোরী সুভার **নিঃসঙ্গ অন্তর্জীবনের এক করুণ ছবি**:

  1. **একাকিত্বের কারণ:** সুভা কথা বলতে পারত না বলে তার পরিবার ও সমাজের কাছে সে যেন এক **অতিরিক্ত বোঝা**। তার মা তাকে নিজের ত্রুটি মনে করতেন। এই বাচাহীনতার কারণেই সমাজের মানুষেরা তাকে ভয় পেত বা এড়িয়ে চলত, যা তার জীবনে গভীর **একাকিত্ব** এনে দিয়েছিল।
  2. **প্রকৃতির আশ্রয়:** এই একাকিত্ব দূর করতে সুভা **প্রকৃতির নীরব জগতের** কাছে আশ্রয় খুঁজে নেয়। সে দেখল, প্রকৃতির কোনো ভাষা নেই, তারও নেই। নদী, গাছপালা এবং গোয়ালঘরের প্রাণী—এরা কেউই সুভার বাকহীনতার জন্য তাকে প্রত্যাখ্যান করেনি।
  3. **প্রাণীজগতের সঙ্গে সম্পর্ক:** গোয়ালঘরের গাভী **সর্বশী ও পাঙ্গুলি** ছিল তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। সুভা তাদের মাথায় হাত বুলিয়ে, নীরবে তাদের পাশে বসে নিজের মনের বেদনা প্রকাশ করত। প্রাণীরা সুভার মনের ভাব **’যেন’** বুঝতে পারত। এটি প্রকৃতির সঙ্গে সুভার **গভীর আত্মিক বন্ধনের** প্রতীক।
  4. **নদীর ভূমিকা:** নদীর কলকল ধ্বনি সুভার কাছে **বৃহৎ প্রকৃতির নীরব ভাষা** মনে হতো। নদীর জল ও তীরের গাছপালা ছিল সুভার **নীরব বন্ধুত্বের** সঙ্গী।

এভাবে সুভা গল্পে সমাজের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত এক কিশোরী তার বাচাহীনতার মধ্যেই প্রকৃতির বিশালতা ও প্রাণীজগতের সরলতার মধ্যে **স্নেহ ও সহানুভূতিপূর্ণ আশ্রয়** খুঁজে পেয়েছিল।

BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu
BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu