অধ্যায়ের বিবরণ
ভূমিকা: জড়জগৎ
যাদের প্রাণ নেই, যারা খাদ্য গ্রহণ করে না, বড় হয় না, তাদের জড়বস্তু বলে। মাটি, জল, বায়ু, পাথর, বই, চেয়ার—সবই জড়জগতের অংশ।
পদার্থের অবস্থা
জড়বস্তু বা পদার্থ সাধারণত তিনটি অবস্থায় থাকতে পারে: কঠিন (নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে), তরল (নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু আকার নেই) এবং গ্যাসীয় (নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন কিছুই নেই)।
জল
জল একটি গুরুত্বপূর্ণ তরল পদার্থ। এটি জীবের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। জল বরফ (কঠিন), জল (তরল) এবং জলীয় বাষ্প (গ্যাসীয়)—এই তিন অবস্থাতেই থাকতে পারে। জলের নিজস্ব কোনো রং বা গন্ধ নেই।
বায়ু
বায়ু একটি গ্যাসীয় পদার্থের মিশ্রণ। এতে অক্সিজেন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেন ইত্যাদি গ্যাস থাকে। আমরা বায়ু দেখতে পাই না, কিন্তু এর অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি। জীবের শ্বাসকার্যের জন্য বায়ু অপরিহার্য।
মাটি
মাটি হলো পৃথিবীর উপরের স্তরের নরম আবরণ। এটি পাথর, বালি, কাদা এবং জৈব পদার্থ (হিউমাস) দিয়ে তৈরি। মাটি উদ্ভিদকে আশ্রয় দেয় এবং পুষ্টি জোগায়।
জীব ও জড়ের নির্ভরশীলতা
জীব ও জড় একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। জীব বেঁচে থাকার জন্য জল, বায়ু ও মাটির ওপর নির্ভর করে। আবার, জীবের মৃতদেহ পচে মাটিতে মিশে মাটিকে উর্বর করে।
প্রশ্নোত্তর
পদার্থের তিনটি অবস্থার নাম লেখো ও উদাহরণ দাও।
পদার্থের তিনটি অবস্থা হলো:
- কঠিন: যার নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে। যেমন: পাথর, কাঠ, লোহা।
- তরল: যার নির্দিষ্ট আয়তন আছে কিন্তু নির্দিষ্ট আকার নেই। যেমন: জল, দুধ, তেল।
- গ্যাসীয়: যার নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন কোনোটিই নেই। যেমন: অক্সিজেন, বাতাস।
বায়ুর দুটি উপাদানের নাম লেখো এবং তাদের একটি করে কাজ লেখো।
বায়ুর দুটি উপাদান হলো অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড।
- অক্সিজেন: জীবের শ্বাসকার্যে সাহায্য করে।
- কার্বন ডাই-অক্সাইড: উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করে।
মাটি কীভাবে তৈরি হয়?
হাজার হাজার বছর ধরে রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে পাথর গুঁড়ো হয়ে বালি ও কাদায় পরিণত হয়। এর সাথে গাছপালা ও প্রাণীর মৃতদেহ পচে তৈরি হওয়া জৈব পদার্থ বা হিউমাস মিশে মাটি তৈরি হয়।
"জীব ও জড় জগৎ একে অপরের পরিপূরক" — ব্যাখ্যা করো।
জীব তার বেঁচে থাকার প্রতিটি মুহূর্তে জড়ের উপর নির্ভর করে। শ্বাস নেওয়ার জন্য বায়ু, পান করার জন্য জল, থাকার জন্য মাটি এবং উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির জন্য সূর্যালোক—এ সবই জড় উপাদান।
অন্যদিকে, জড় জগৎও জীবের দ্বারা প্রভাবিত হয়। গাছপালা মাটিকে ক্ষয় হওয়া থেকে বাঁচায়। প্রাণীর মৃতদেহ মাটিতে মিশে হিউমাস তৈরি করে, যা মাটির উর্বরতা বাড়ায়। তাই বলা যায়, জীব ও জড় জগৎ একে অপরের পরিপূরক।
ক্রিয়াকলাপ
কাজ ১: ঠিক না ভুল লেখো
ক) দুধ একটি কঠিন পদার্থ। (উত্তর: ভুল)
খ) বায়ুর নিজস্ব আকার আছে। (উত্তর: ভুল)
গ) জল জমে বরফ হলে তরল থেকে কঠিনে পরিণত হয়। (উত্তর: ঠিক)
ঘ) হিউমাস মাটির উর্বরতা কমায়। (উত্তর: ভুল)
কাজ ২: বাম দিকের সাথে ডান দিক মেলাও
| বাম দিক | ডান দিক |
|---|---|
| ১. জলীয় বাষ্প | (ক) কঠিন পদার্থ |
| ২. চেয়ার | (খ) গ্যাসীয় পদার্থ |
| ৩. তেল | (গ) মাটির উপাদান |
| ৪. হিউমাস | (ঘ) তরল পদার্থ |
উত্তর: ১→(খ), ২→(ক), ৩→(ঘ), ৪→(গ)
কাজ ৩: নীচের জিনিসগুলিকে কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থে ভাগ করো
(পাথর, দুধ, অক্সিজেন, বই, শরবত, ধোঁয়া, লোহা, কার্বন ডাই-অক্সাইড)
| কঠিন | তরল | গ্যাসীয় |
|---|---|---|
| পাথর, বই, লোহা | দুধ, শরবত | অক্সিজেন, ধোঁয়া, কার্বন ডাই-অক্সাইড |
কাজ ৪: একটি সহজ পরীক্ষা
উদ্দেশ্য: বায়ু জায়গা দখল করে তা প্রমাণ করা।
উপকরণ: একটি কাঁচের গ্লাস, একটি জল ভর্তি বালতি, এক টুকরো শুকনো কাগজ।
পদ্ধতি: কাগজের টুকরোটিকে দলা পাকিয়ে গ্লাসের একদম নীচে এমনভাবে রাখো যেন উল্টো করলেও না পড়ে। এবার গ্লাসটিকে সোজা উল্টো করে বালতির জলে ডোবাও।
পর্যবেক্ষণ: কিছুক্ষণ পর গ্লাসটি সোজাভাবে তুলে আনো। দেখবে কাগজের টুকরোটি একদম শুকনো আছে।
সিদ্ধান্ত: গ্লাসের ভেতরে বায়ু থাকায় জল ঢুকতে পারেনি। তাই প্রমাণিত হয় যে বায়ু জায়গা দখল করে।