অধ্যায় ২: স্বরধ্বনি

বাংলা ভাষাপাঠ - চতুর্থ শ্রেণি

অধ্যায় ২: স্বরধ্বনি

ভূমিকা: শব্দের প্রাণ

আচ্ছা, তোমরা কি জানো, আমাদের প্রতিটি শব্দের একটা 'প্রাণ' থাকে? এই প্রাণ ছাড়া শব্দগুলো ঠিকমতো শোনায় না, যেন তারা কথাই বলতে পারে না। বাংলা ভাষায় এই প্রাণের কাজটি করে স্বরধ্বনি। ভেবে দেখো তো, 'ক', 'ল', 'ম' - এই তিনটি ধ্বনিকে যদি আমরা শুধু পর পর বলি, তাহলে কি 'কলম' শব্দটি তৈরি হয়? না! এর জন্য আমাদের 'অ'-এর সাহায্য নিতে হয় (ক্+অ+ল্+অ+ম্+অ)। এই 'অ'-ই হলো স্বরধ্বনি।

স্বরধ্বনিগুলো অনেকটা গানের সুরের মতো। এরা নিজেরাই একা একা গাইতে পারে, আবার অন্য ধ্বনির সাথে মিশে গিয়ে নতুন সুর তৈরি করতে পারে। আজ আমরা বাংলা ভাষার এই সুর বা স্বরধ্বনিদের গল্প শুনব। জানব, তারা কত রকমের হয় এবং কীভাবে তারা শব্দকে জীবন্ত করে তোলে।

সারাংশ

যেসব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে আসা বাতাস মুখের মধ্যে কোথাও বাধা পায় না এবং অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়াই উচ্চারিত হতে পারে, তাদের স্বরধ্বনি বলে। বাংলা ভাষায় মোট ১১টি স্বরধ্বনি আছে। এই স্বরধ্বনিগুলো দুই রূপে ব্যবহৃত হয়: স্বাধীন বা পূর্ণ রূপ (যখন শব্দের শুরুতে বসে) এবং সংক্ষিপ্ত বা 'কার' রূপ (যখন ব্যঞ্জনধ্বনির সাথে যুক্ত হয়)। উচ্চারণের সময় অনুযায়ী এদের হ্রস্ব স্বর (ছোট) ও দীর্ঘ স্বর (বড়) - এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

স্বরধ্বনিদের চিনে নিই

বাংলা ভাষার ১১ জন 'সুরকার' বা স্বরধ্বনি হলো:

অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ

স্বরধ্বনির দুই রূপ

  • স্বাধীন রূপ: যখন স্বরধ্বনিটি নিজে নিজেই একটি শব্দের শুরুতে বসে। যেমন: জগর, ম, ট, গল, ট।
  • সংক্ষিপ্ত রূপ (কার): যখন স্বরধ্বনি ব্যঞ্জনধ্বনির সাথে চিহ্ন বা 'কার' হিসেবে যুক্ত হয়। যেমন: ক + আ (া) = কা, ক + ই (ি) = কি, ক + উ (ু) = কু।
স্বরধ্বনির কার-চিহ্ন

চিত্র: স্বরধ্বনির সংক্ষিপ্ত রূপ বা কার-চিহ্ন

উচ্চারণের সময় অনুযায়ী ভাগ

স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে কতটুকু সময় লাগছে, তার উপর ভিত্তি করে এদের দুই ভাগে ভাগ করা হয়:

  • হ্রস্ব স্বর (ছোট সুর): যেগুলো উচ্চারণ করতে কম সময় লাগে। বাংলায় হ্রস্ব স্বর ৪টি: অ, ই, উ, ঋ
  • দীর্ঘ স্বর (লম্বা সুর): যেগুলো উচ্চারণ করতে বেশি সময় লাগে। বাংলায় দীর্ঘ স্বর ৭টি: আ, ঈ, ঊ, এ, ঐ, ও, ঔ

যৌগিক স্বরধ্বনি (দুটি সুরের মিশ্রণ)

কিছু স্বরধ্বনি আছে যেগুলো দুটি স্বরের মিশ্রণে তৈরি। এদের যৌগিক স্বর বা দ্বিস্বরধ্বনি বলে। বাংলায় এমন দুটি স্বরধ্বনি হলো:

  • = অ + ই
  • = অ + উ

হাতে কলমে (উত্তরসহ)

১. স্বরধ্বনি কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উত্তর: যে ধ্বনি অন্য কোনো ধ্বনির সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে উচ্চারিত হতে পারে এবং উচ্চারণের সময় মুখের মধ্যে বাতাস বাধা পায় না, তাকে স্বরধ্বনি বলে। যেমন: অ, আ, ই ইত্যাদি।

২. হ্রস্ব স্বর ও দীর্ঘ স্বর কী? প্রত্যেকটির দুটি করে উদাহরণ দাও।

উত্তর:

  • হ্রস্ব স্বর: যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে কম সময় লাগে। যেমন: অ, ই।
  • দীর্ঘ স্বর: যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে বেশি সময় লাগে। যেমন: আ, ঈ।
৩. স্বরধ্বনির সংক্ষিপ্ত রূপকে কী বলে? 'ম' ব্যঞ্জনের সাথে 'আ', 'উ', 'এ' যোগ করে দেখাও।

উত্তর: স্বরধ্বনির সংক্ষিপ্ত রূপকে 'কার' বলে।

  • ম্ + আ (া) = মা
  • ম্ + উ (ু) = মু
  • ম্ + এ (ে) = মে

অধ্যায়ের কুইজ

এই অধ্যায়ে তুমি কতটা শিখলে, তা পরীক্ষা করার জন্য প্রস্তুত?

মোট ৩০টি প্রশ্ন আছে। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর পাবে।

BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu
BISWAZ GROWTH ACADEMY - Class Menu